আমির হোসাইন, ঈদগাঁও::
কক্সবাজারের ঈদগাঁও থানায় ইদানিং দালাল চক্রের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দালাল চক্রের কারণে থানায় আগত সেবাপ্রার্থীরা পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছে। থানায় তিনস্তরের দালালচক্র পুলিশের সাথে যুগসাজসে জিম্মি করে রেখেছে সেবাপ্রার্থীদের।
এদের মধ্যে রয়েছে পেশাদার দালাল, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও কথিত ভূয়া সাংবাদিক। থানাতে এমনিতে কিছু পেশাদার দালালচক্র সবসময় থানার সোর্স হিসাবে কাজ করে থাকে। এদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতাকর্মী, ভূইঁফোর অখ্যাত পত্রিকার প্রতিনিধি, নাম সর্বস্ব অনলাইন পোর্টালের ফেসবুক চালক কিছু তরুণ নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে থানায় দালালি করছে। এদের অনেকে বিভিন্ন নাম দিয়ে অনুমোদনহীন অনলাইন খুলে। সেখানে ভিডিও ছবি ছেড়ে সাংবাদিক হিসাবে নিজেদের জাহির করছে। থানায় সেবাপ্রার্থীর চেয়ে দালালের সংখ্যা বেশি। বিশেষকরে সাংবাদিক পরিচয়দানকারী তরুণেরা প্রায় সময় থানা কম্পাউন্ডে ঘুরাফেরা করে। থানায় কেউ জিডি, অভিযোগ, কিংবা মামলা করতে আসলেই দালালের খপ্পরে পড়তে হয়। দালাল চক্রের কারণে কিশোর গ্যাং, ভূমি দখল, মাদক কারবারীরা ফায়দা লুটতে থাকে।
এতে পুলিশের নাম দিয়ে দালাল চক্র হাতিয়ে নেয় সেবাপ্রার্থী থেকে হাজার হাজার টাকা। ভুয়া সাংবাদিকেরা অনেক সময় রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত থানায় বসে থাকে। এসব সাংবাদিকদের কারণে ঈদগাঁওয়ের প্রকৃত সাংবাদিকেরা বিব্রত।
সম্প্রতি এসব সোর্স ও দালাল সিন্ডিকেট থানা পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে ও ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধীদের পাশাপাশি নিরাপরাধ সাধারণ জনগনকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করছে। থানার বিভিন্ন মামলার এজাহারে অজ্ঞাতনামা আসামী উল্লেখ থাকার বিষয়টিকে পুঁজি করে প্রতিপক্ষের উপর প্রতিশোধ পরায়ন হচ্ছে এসব অসাধুরা। তারা নানা কৌশলে থানা পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীর স্থলে নিরাপরাধ সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানীর শিকার করছে।
জানা গেছে, মামলা থেকে রেহাই পেতে ভুক্তভোগীরা ঐসব সোর্স ও দালাল সিন্ডিকেটের চাহিবা মাত্র লক্ষ লক্ষ টাকা তাদের হাতে সঁপে দিচ্ছে। এসবের মধ্যে বিভিন্ন অপরাধী ও গ্রুপ লিডারদের সাথে যাদের সখ্যতা রয়েছে তাদেরকে পুলিশের গোপন তথ্য ও অভিযানের বিষয়টি অগ্রিম জানিয়ে দিচ্ছে। পেশাদার জুয়াড়ী, চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীরা তাদের অবৈধ কাজ সেরে নিচ্ছে সোর্স ও দালাল সিন্ডিকেটের সতর্ক বার্তায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসি জানান, অপরাধীরা সম্ভাব্য গ্রেপ্তার সহ পুলিশি হয়রানি এড়াতে নিয়মিত মাসিক মাসোহারাও প্রদান করছে এসব সোর্স, দালাল ও কথিত সাংবাদিকদের।
ঈদগাঁও থানার ওসি গোলাম কবির সহ কিছু অসাধু কর্মকর্তার নিত্যদিন যোগাযোগ রয়েছে এসব সোর্স, দালাল ও কথিত সাংবাদিকদের সাথে।
তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ আটক করছে অপরাধী ও নিরীহদের। নিয়মিত মামলায় জড়ানোর ভয় দেখিয়ে ঘুষ বানিজ্য করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এই টাকা পরে তাদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা হয়।
ব্যাপক তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কবির সহ অসাধু কর্মকর্তাদেরকে এসব সোর্স, দালাল ও কথিত সাংবাদিকরা কখনও মামা, কখনও ভাই অথবা দুলাভাই আবার কখনও খালু আবার কখনও বেয়াই সম্বোধন পূর্বক সম্পর্ককে আরও মজবুত করে অনৈতিক বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। মাদক বিক্রেতা চক্রের সাথে রয়েছে এদের নিবীড় সম্পর্ক। ফলে অপরাধীরা নিয়ন্ত্রনহীনভাবে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অপকর্ম। এসব সোর্স ও কথিত নামধারী সাংবাদিকদের দালালী সিন্ডিকেটের অপকর্মের কারণে সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে পুলিশ ও সুস্থধারার সাংবাদিক মহলের। এতে বাড়ছে অপরাধ, হয়রানীর শিকার নিরহ জনগন।
এ বিষয়ে পুলিশের ও সাংবাদিক মহলের সুনাম রক্ষার্থে তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসি।