মহেশখালী প্রতিনিধি :
মহেশখালীর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হাটবাজার বসিয়ে টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলছে ইজারাদারদের বিরুদ্ধে।
মহেশখালী উপজেলার ১৯টি বাজার সরজমিন পরিদর্শনে কোথাও চোখে পড়েনি টোল আদায়ের দৃশ্যমান তালিকা। এতে করে অন্যায়ভাবে টোল আদায় নিয়ে ইজারাদার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রায়সময় ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে। বাজার কমিটি ও ইজারাদারদের মধ্যে আঁতাত থাকায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েও পাচ্ছে না ন্যায় বিচার এমন অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
এমনকি এসব কাজে প্রভাবশালি সিন্ডিকেটের হাত থাকায় অতিরিক্ত টোল আদায় নিয়ে প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন ভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় বলেও জানান ।
ভুক্তভোগীদের দাবী, প্রশাসনের তদারকি না থাকায় ইজারাদারদের কাল্পনিক তালিকায় আদায় হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত টোল। বছর বছর হাটবাজার ইজারা হলেও টোল আদায়ের দৃশ্যমান তালিকা নিয়ে কেন প্রশাসনের অনীহা-এমন প্রশ্ন সচেতন মহলে। ইচ্ছেমতো টোল আদায়ের সুযোগ থাকায় অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে বাজার ইজারা মূল্য। ব্যবসায়ীদের ওপর চলছে মনগড়া টোল আদায়ের প্রতিযোগিতা।
এছাড়াও কর্তৃক্ষের তদারকি না থাকায় রাস্তা দখল করে বড় মহেশখালী বাজারে বসে অস্থায়ী দোকান। এতে যানজটে পড়ে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘন্টা, বাড়ছে দুর্ঘটনা। বাজারে বিভিন্ন প্রকার পণ্য বিক্রির জন্য নির্ধারিত স্থান থাকলেও সেখানে না বসিয়ে যত্রতত্র ও ব্যক্তিমালিকানাধীন মার্কেটের প্রবেশ পথে সড়কে অস্থায়ী দোকান বসানোর অভিযোগ উঠেছে।
এতে করে ইজারাদার ও মার্কেট মালিকদের মধ্যে বাড়ছে বিরোধ, সংঘাত হতে পারে যে কোন সময়। এইদিকে উপজেলার বড় মহেশখালী নতুন বাজারসহ,নোনাছড়ি, কালারমারছড়া ও মাতারবাড়ী নতুন বাজার সিএনজি স্টেশন সংলগ্ন মার্কেটের সামনে সডকের ওপর ইজারাদার’রা বিভিন্ন প্রকার ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের বসানোর ফলে যানজট লেগে থাকে প্রায় সময়।
এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন এমনই অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়াও ইতিপূর্বে মাতারবাড়ীতে পণ্য সরবরাহ করতে আসা বিভিন্ন কোম্পানির গাড়ীর ড্রাইভারদের কাছ থেকেও টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে বাজার কমিটির নিরবতায় বেপরোয়া ইজারাদাররা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী জানান-তার কাছ থেকে আগের ইজারাদার জোরপূর্বক প্রতিমাসে দেড় হাজার টাকা নিতো। বর্তমান ইজারাদার মাসে দুই হাজার টাকা দাবি করতেছে। অথচ সে ব্যক্তি মালিকানাধীন মার্কেটে দোকান করে। এটি বাজার কমিটির সভাপতিকে জানানোর পরও কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
একই অভিযোগ করেন বেশকিছু ব্যবসায়ি, কিন্তু তারা নিরুপায়। চকরিয়া কিংবা বদরখালী থেকে পণ্য পরিবহনে আসা গাড়ি থেকেও টোল আদায় করেন ইজারাদার।
এ নিয়ে ব্যবসায়ী-পরিবহন শ্রমিকদের সাথে প্রায়ই ঝগড়া লেগেই থাকে বলে জানান অনেকেই। বাজার ইজারাদার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ঝগড়াটে প্রকৃতির হওয়ায় কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে লাঞ্ছিত হতে হয় এমন অভিযোগ পাওয়া যায়।
কালারমারছড়া বাজারেও একই অবস্থা। ইউনিয়নের ভূমি অফিসের দক্ষিণ সীমানা থেকে প্রায় দুশ ফুট প্রধান সড়ক দখল করে বাজার কমিটি ও ইজারাদার বেশকিছু দোকান ভাড়া দেন। এদের থেকে এককালিন ১৫-২০ হাজার ও মাসিক ১৫০০-২০০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয় বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ি।
এভাবে মহেশখালীর প্রধান সড়কের দুপাশে ফুটপাত দখল করে অস্থায়ী দোকান বসানোর ফলে সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা। ইজারাদারদের অন্যায় কর্মকান্ড ও সড়ক দুর্ঘটনারোধ কল্পে অস্থায়ী দোকান উচ্ছেদ এখন সময়ের দাবি।
বিশেষ করে হোয়ানকের কালাগাজীর পাড়া বাজার কালভার্ট ওপর দুপাশে ফুটপাত দখল করে বাজার বসার কারণে যানচলাচলে বিঘ্নসৃষ্টি সহ ছোটবড় দুর্ঘটনার আশংকায় স্থানীয়রা।
এছাড়াও বাজারের নির্ধারিত জায়গা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জবরদখলে থাকায় অনেকটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইজারাদার সড়ক দখল করে হাটবাজার বসান এমনও তথ্য দেন স্থানীয়রা।
বিষয়গুলো নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াছিন’র দৃষ্টিআকর্ষণ করলে তিনি জানান-প্রত্যেক ইজারাদারকে দৃশমান স্থানে টোল আদায়ে তালিকা টাঙানোর জন্য তালিকা সরবরাহ করা হয়েছে। কেউ যদি তালিকা না টাঙিয়ে কৌশলে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কর্তৃপক্ষ শুধু কথায় সীমাবদ্ধ না থেকে হাটবাজারের জায়গা দখলমুক্ত করা এবং ইজারার পাশাপাশি এগুলো পরিচালনা বিষয়ে বিধিনিষেধ মানতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা প্রদানের দাবি উঠছে সর্বত্র।