তীব্র গরমের সঙ্গে নগরে পাল্লা দিয়ে চলা লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ জনজীবন। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন চট্টগ্রামের মানুষ।
শনিবার (৩ জুন) দুপুরের দিকে চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ বলেন, চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকার কারণে প্রচুর ঘাম হচ্ছে এবং গরমের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে।
গরম আর লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় তুলছেন অনেকে। তাসনিম হাসান নামের এক যুবক লিখেন, বিশ্বমানের গরম পড়ছে। সাজ্জাদ এইচ রাকিব লিখেন, স্মার্ট দেশে বিদ্যুৎ অফিসের আনস্মার্ট আচরণ লক্ষ্য করছি। গেলো কয়েকমাস আগেও গণমাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের গল্প শুনেছি। সংসদেও দেখেছি বিদ্যুৎ নিয়ে নানান মনগড়া বক্তব্য। কিন্তু কাজের বেলায় শূন্য। বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রামে বেশ কিছুদিন বিদ্যুতের নাজুক পরিস্থিতি। গ্রাম-গঞ্জের পরিস্থিতি আরো খারাপ।
গরমে শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হওয়ার পাশাপাশি নগরীতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার চিত্রও একই। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিনে যেমন অবস্থা, তেমনি রাতের অবস্থা আরও খারাপ। প্রত্যেক রাতেই প্রথমদিকে, মধ্যভাগে এবং শেষার্ধ্বে বিদ্যুৎ থাকে না উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।
দুপুরে সূর্যের তাপ বৃদ্ধির কারণে চট্টগ্রাম শহরে লোকজনের আনাগোনাও কমে গেছে। জরুরি কাজ না থাকলে ঘর থেকে বের হচ্ছে না অনেকে।
ড. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহের নিগার সুলতানা বলেন, স্কুলে গেলে বিদ্যুৎ থাকে না, বাসায় এলেও বিদ্যুৎ পাই না। সন্ধ্যায় পড়তে বসলেও বিদ্যুৎ অনেকটা ভোগায়। সেই সঙ্গে তীব্র গরমে পড়ালেখা করা দায়।
দিনমজুর রফিক মিয়া বলেন, প্রচণ্ড গরম। এরপরেও পেটের দায়ে কাজ করতে বের হয়েছি। যারা কাজ দেন, তারা রোদ দেখেন না। রোদ বেশি থাকলে টাকা বেশি দেওয়া হয় না। বাড়ি থেকে খাবার এনে খেতে হয়।
নগরের বাকলিয়া কল্পলোক আবাসিক এলাকায় গাছের নিচে বসে কয়েকজন রিকশাচালক অলস সময় কাটাচ্ছিলেন। তারা বললেন- ভাড়া তেমন নেই। বিকেলে আবার কাজে ফিরবেন তারা।
মো. জসিম নামের এক রিকশাচালক বলেন, দিনে ৫০০-৬০০ টাকা আয় হয়। গরমের কারণে যাত্রী না পেয়ে আয় কমে গেছে। সকাল আর সন্ধ্যায় মানুষ বের হয় বেশি। ওই সময় একটু ভাড়া পাওয়া যায়। বাসায় গিয়ে লোডশেডিং এর কষ্ট। রাতে ঘুম হয় না।
চট্টগ্রামে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিন গড়ে ১১০০-১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। সেখানে পাওয়া যায় ৮০০ থেকে ৮৫০ মেগাওয়াট।
চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী এম রেজাউল করিম বলেন বলেন, চট্টগ্রামে খুব গরম পড়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দফায় দফায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। চট্টগ্রামে দৈনিক যে বিদ্যুতের চাহিদা তার চেয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।