কক্সবাজার পৌরসভার সদ্য-নির্বাচিত মেয়র মাহাবুবুর রহমান প্রাণবন্ত, উচ্ছ্বসিত, উপভোগ্য ও শ্রান্তিময় সময় পার করছেন। ভোর হতে মধ্যরাত পর্যন্ত ফুলেল শুভেচ্ছা, সিক্ত আলিংগনে আপ্পুত হচ্ছেন। দুমাস পর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিবেন।
নবনির্বাচিত মেয়রের প্রচার কৌশল হতে দুটি প্রণিধানযোগ্য বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা করে প্রত্যাশার জাল বুনা যায়।
প্রথমত- তিনি প্রথম দিন হতেই বলে এসেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছে ও স্বপ্নের রূপকার হতে চান তিনি এবং কক্সবাজারের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে সর্বোচ্চ শ্রেয় উদ্যোগ তিনি বাস্তবায়ন করবেন।
দ্বিতীয়ত- অশ্রুসজল ও সিক্ত নয়নে মেয়র নিজেকে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান দাবি করে কক্সবাজারের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার অংগীকার করেছেন। সর্বশেষ, গত মংগলবার প্রেসক্লাবের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে রক্তচক্ষু দেখিয়েছেন যা অনেকের মনে আস্থার আশা জাগিয়েছে।
যদিও আমরা অবগত আছি, সাংবিধানিক ও প্রথাগতভাবে একজন মেয়রের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু উল্লিখিত দুটি পয়েন্টে আমরা অনুধাবন করতে পারি- মেয়র রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শক্তিকে আস্থায় নিয়ে ভালকিছু করার আস্বাস জিইয়ে রেখেছেন।
এই বাস্তবিকতায়, পোস্টে সন্নিবেশিত ছবিটির দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে। ছবিটি, কক্সবাজার পৌরসভার তিন নং ওয়ার্ডের সংশ্লিষ্ট কস্তুরিঘাট- খুরুস্কুল নির্মাণাধীন সেতুর। দেখতে ফ্লাইওভার মনে হলেও, এটি মূলত বাঁকখালী নদীর উপর নির্মিত সেতু যেখানে দশক আগেও মাছ ধরার ট্রলারের আনাগোনা ছিল, ছিল জোয়ার-ভাটা । জনমুখে শুনা যাচ্ছে, উক্ত সেতুকে কেন্দ্র করে নদী নাহোক, উন্মুক্ত পর্যটন গড়ে উঠবে। ক্যাফে ঝিলমিল, বাহারী কাবাব সহ অনেক ক্ষুদ্র প্রকল্পের স্বপ্ন দেখছেন কেউ কেউ।
সাম্প্রতিক অনুসন্ধান মূলক নিউজ সূত্রে (টিবিএস নিউজ) আমরা জেনেছি-
"বাঁকখালী নদীর দুই পাশের প্রায় ১৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শত শত স্থাপনা করেছে অবৈধ দখলদাররা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্মাণ করছে এব্রীজ। ৬ নম্বর ঘাট থেকে উত্তর নুনিয়াছড়া পর্যন্ত প্রায় ২৮টি অবৈধ জেটি রয়েছে বর্তমানে। সবকটিই অনুমোদনহীন। নদী থেকে বালু তুলে রাখার পাশাপাশি সিলেট থেকে পাথর ও বালু এনে বিক্রির জন্য মোট ৫টি সেল সেন্টার করা হয়েছে অবৈধভাবে। কয়েকটি তেলের বার্জও রয়েছে। এছাড়া রয়েছে বরফকল, কোল্ড স্টোরেজ, ফিশিং অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ডকইয়ার্ড, মাছের আড়ত, শুঁটকির আড়তসহ শত শত বসতঘর। ৬ নম্বর ঘাটের পাশে করা হয়েছে ট্রাক স্ট্যান্ড। "
জাতিসংঘের রিমোট সেন্সিং এক্সপার্ট ড. আবু রুশেদ জামিল মাহমুদের বরাতে জানা যাচ্ছে
(নাসার ল্যান্ডসেট ইমেজের ১৯৮৫ সালের ছবি এবং গুগল আর্থের ২০০৪ সালের পর থেকে ২০২২ সালের ছবি বিশ্লেষণ করেছেন তিনি) ১৯৮৫ সালেও বর্তমান কস্তুরিঘাট এলাকাটিতে নদীর বাঁক ছিল। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরের স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, কস্তুরিঘাট এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করতো। ছিল লবণের মাঠ। তখন প্রাকৃতিকভাবে কিছু ম্যানগ্রোভ হয়েছিল সেসময়। অর্থাৎ সেখানে ম্যানগ্রোভ হওয়ার সম্ভবনা ছিল। দখলের মাধ্যমে সেটিও নষ্ট করা হয়েছে। নির্মাণাধীন বাঁকখালী ব্রীজটি একসময় পুরোপরি নদী ছিল। ২০১৩ সালে পৌরসভা ময়লা ফেলা শুরুর মাধ্যমে নদীর দখলদারিত্বের সংক্রমণ শুরু হয়। ২০১৬ সালে এখানে থাকা খালটির দু'পাশ বন্ধ করে মেরে ফেলা হয়। বন্ধ হয়ে যায় পানির প্রবাহ। ২০১৫ সালের পর থেকে দখল শুরু হয় বড় এলাকাজুড়ে। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে পুরো কস্তুরিঘাট এলাকায় বালু ফেলে নদীর চিহ্ন পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন করা হয়। এই সময়টায় বিশাল আকারে দখল হয়।
উপরিউক্ত তথ্যগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন সময় এসেছে। আমরা সময়ে সময়ে পরিবেশবাদী, নাগরিক প্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদদের ও গঠনমূলক প্রতিবাদ, বক্তব্য ঠাহর করেছি। কদাচিৎ, আলোচিত জনপ্রতিনিধিদের দখলদারিত্বের সমর্থন করার তথ্যও চোখে পড়েছে।
আমরা ছবিতে দেখছি আর ভাবছি, এটি সেতু নাকি ফ্লাই ওভার? প্রমত্তা স্রোত না আসুক, সেতুর গাইড ওয়ালের সংশ্লিষ্ট দখল হয়ে যাওয়া নদীর জমি পুনরুদ্ধার না হোক, অন্তত সেতুর নীচের নদীর স্রোত কি ফিরিয়ে আনা যায়?
মাননীয় মেয়র, অনেকের মত কথার পপকর্ন না হয়ে আপনার বাস্তবিক উদ্যোগ ও প্রয়োজনে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতার সহযোগিতা নিয়ে দখলদার মুক্ত করার যে ফুলঝুরি আপনি বলছেন, তা আমাদের হৃদয়ে পুষ্পিত করোক সুবাতাসে।
আপনার কথাগুলো কর্মে রূপান্তরিত হোক।
মুহিব্বুল মোক্তাদির তানিম
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক
ঢাকাস্থ কক্সবাজার সমিতি।