
গরু বাজারে গরু কিনতে গিয়ে অপহরনের শিকার হয়েছেন প্রবাসী আব্দুল হাকিম। বিচারের জন্য বলে কলঘর বাজার থেকে একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক মারধর ও নগদ ৮ লাখ টাকা দাবী করার অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজার রামুর দক্ষিণ চাকমারকুল ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার বেলাল উদ্দিন শাহীনের বিরুদ্ধে। একই সাথে প্রবাসী আব্দুল হাকিমের সাথে থাকা মোহাম্মদ শরীফকেও আটকে রাখা হয়েছিলো। রোববার রাত ১০ টার দিকে অপহরণকারী মেম্বার বেলাল, সিরাজুল হকসহ তার সাঙ্গপাঙ্গদের অপহরণের ৮ লাখ টাকা দেয়ার আশ^াস দিয়ে প্রাণ নিয়ে ফিরে আসেন পিএমখালীর জুমছড়ির মোক্তার আহমদের ছেলে মোঃ শরীফ। ঘটনাস্থল থেকে ফিরে সাংবাদিকের সহযোগীতা নিয়ে পুলিশকে ঘটনাটি জানালে রামু থানা পুলিশ অপহরণকারী বেলাল উদ্দিন শাহীনকে বিষয়টি অবগত করতেই পুলিশ আসার আগেই নিজে বাঁচার জন্য চৌকিদার মোঃ শফি ও শফিক আহম্মদ এই দুইজনকে দিয়ে পিএমখালী চেরাংঘরে পাঠিয়ে দেন বেলাল উদ্দিন শাহীন। পিএমখালী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রাত দেড়টার দিকে দক্ষিণ চাকমারকুল ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ফোন করে এই এলাকার আব্দুল হাকিমকে রিসিভ করতে অনুরোধ করেন। রাদ দেড়টার পর রামুর চাকমারকুল ইউনিয়ন পরিষদের দুইজন চৌকিদার যখন আসছিলো তাদের কাছে আব্দুল হাকিমের মুখ ফুলা দেখে জানতে চাওয়া হয়েছিলো যে তাকে কারা মারছে। যখন পিএমখালীর চেরাংঘর বাজারে মেম্বার মোহাম্মদ আলমের কাছে সোপর্দ করছিলো তখন অপহরণের শিকার আব্দুল হাকিম আহত অবস্থায় ছিলেন।
গুরতর আহত আব্দুল হাকিম সাংবাদিকদের জানান, রামুর দক্ষিণ চাকমারকুল ইউনিয়নের জান্নাতুল বকেয়া তার স্ত্রী। তবে আব্দুল হাকিম যখন বিদেশে ছিলেন তার আচরণ এতোটা পরিবর্তন হয়ে যায় বলার মতো না। কখনো বিভাগের বাইরে আবার কখনো জেলার বাইরে স্বামীর অনুমতি না নিয়েই ঘুরতে থাকেন। স্ত্রীর সাথে এসব বিষয়ে বনিবনা না হওয়ায় স্ত্রী জান্নাতুল বকেয়ার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন আব্দুল হাকিম। কিন্তু এরই মাঝে রোববার (১৮ জুন) বিকাল ৫টার দিকে চাকমারকুল কলঘর বাজারে গেলে আব্দুল হাকিমের স্ত্রীর জান্নাতুল বকেয়ার ঘনিষ্ঠ আত্বীয় মেম্বার বেলাল উদ্দিন শাহীন জোর করে তুলে নিয়ে যায় রামুর কলঘর বাজারস্থ অন্ধকার গলিতে। সেখানে লোহার রড, হাতুড়ি ও কিল, ঘুষি মেরে আহত করে আব্দুল হাকিমকে। ওই সময় গরু কিনতে আসা ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে নেন বেলাল উদ্দিন শাহীন ও তার বাহিনী। রোববার রাত ১০টার দিকে মোঃ শরীফের স্ত্রী খতিজা বেগমকে ফোন করে প্রবাসী আব্দুল হাকিমের পাসপোর্ট ও বিমানের টিকেট নিয়ে যেত্যে বাধ্য করান মেম্বার বেলাল উদ্দিন। পরে গভীর রাত দেড়টার দিকে রামু থানার ওসির ফোন পেয়ে ভয়ে পিএমখালীতে পৌছে দেন আব্দুল হাকিমকে। তবে তার পাসপোর্ট ও বিমানের টিকেট ফেরত দেননি আব্দুল হাকিমকে। যখন পাসপোর্ট ও বিমানের টিকেট ফেরত চেয়েছে তখন বলছে ৮ লাখ টাকা দিতে হবে। না হয় রোহিঙ্গা বলে অভিযোগ করে পাসপোর্ট থানায় জমা দিবে এমন হুমকি দিচ্ছেন চাকমারকুল ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার বেলাল উদ্দিন শাহীন।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে বারংবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলছেন, পাসপোর্ট ও বিমানের টিকেট স্ত্রী জান্নাতুল বকেয়া নিয়েছে। তিনি নেননি। রাতভর মারধর করে আব্দুল হাকিমকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি তিনি বলছেন, পিএমখালী মেম্বারকে ফোন দিয়ে নিরাপদে পৌছে দেয়া হয়েছে বলে দাবী করেন বেলাল উদ্দিন।
এদিকে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ারুল হুসাইন জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থেকে ম্যাসেজটি পেয়েই তিনি মেম্বার বেলাল উদ্দিনকে ফোন দেন। পরবর্তীতে তাকে বাসায় পৌছে দেয়া হয়েছে বলে জানান।
সোমবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদ শরীফ বাদি হয়ে মেম্বার বেলালকে প্রধান আসামী করে ৫ জনের নামে একটি এজাহার দায়ের করেছেন।
এদিকে সন্ধ্যা থেকে মারধর এবং বাড়িঘর থেকে পাসপোর্ট ও বিমানের টিকেট নিতে বাধ্য করার বিষয়ে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ইউপি সদস্য বেলাল উদ্দিন শাহীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করেন পিএমখালী জুমছড়ি এলাকার শরীফ ও আহত আব্দুল হাকিম।