গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন— শাহাদাত হোসেন (২০), শেখ ফরিদ (২০), তানভীর হাসান (২১), জাহিদুল ইসলাম (২০) ও শাহিন আলম (১৭)।
হত্যার শিকার ওই যুবকের নাম সোলায়মান (২২)। তিনি গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সোভাগঞ্জ গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নানের ছেলে।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘গত ৩০ জুলাই সকালে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর পেয়ে হাত-পা বাধা অবস্থায় অজ্ঞাত লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারের পর লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে আমরা লাশের নাম-পরিচয় নিশ্চিত করতে পারছিলাম না। পরে ১ আগস্ট সন্ধ্যার দিকে একটি অটো রিকশাচালকের মা আকবর শাহ থানায় মিসিং ডায়েরি করতে আসে। বিষয়টি আকবরশাহ থানার ডিউটি অফিসার সীতাকুণ্ড থানাকে অবহিত করে। ডায়েরি করতে আসা মহিলার বর্ণনার সঙ্গে উদ্ধার হওয়ার লাশের বর্ণনা মিলে যাওয়ায় ওই মহিলাকে সীতাকুণ্ড থানায় আসতে বলা হয়। পরে ওই মহিলা তার অন্যান্য আত্মীয়স্বজন নিয়ে এসে লাশের ছবি দেখার পর তার ছেলে (সোলায়মান) বলে শনাক্ত করেন।’
‘এরপর সোলায়মানের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও প্রযুক্তির সহায়তায় খুনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) ভোরে নগরের আকবরশাহ এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. শাহাদাত হোসেন, শেখ ফরিদ, তানভীর হাসান, জাহিদুল ইসলাম ও শাহিন আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। একইসঙ্গে খুনের বর্ণনাও করে তারা। এছাড়া আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রামের মাহমুদুল হক সানির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে আসামিরা।’
যে কারণে হত্যা করা হয় সোলায়মানকে—
একটি অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে শাহাদাত, ফরিদ, তানভীর, শাহীন, সাকিব ও জাহিদুলসহ ৭ জন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তানভীর শাহীন ও জাহিদুল সিটি গেট সংলগ্ন কর্নেল হাট এলাকা থেকে ভাটিয়ারি যাওয়া এবং আসার জন্য ৩০০ টাকায় সোলায়মানের অটোরিকশাটি ভাড়া করে। অপরদিকে ফরিদ, শাকিব, শাহাদাতসহ ৪জন কাভার্ডভ্যানে করে অটোরিকশা যাওয়ার আগে ভাটিয়ারির দিকে রওনা হয়। বিএম গেটের সামনে পৌঁছালে কাভার্ডভ্যান দাঁড় করিয়ে তারা সোলায়মানের কাছ থেকে অটোরিকশাটি নিয়ে নেয় এবং সোলায়মানকে কাভার্ডভ্যানে উঠিয়ে নেয়। সেখানে তারা সোলায়মানকে হাত-পা বেঁধে কাভার্ডভ্যানের কেবিনের নিচে ফেলে রাখে।
এরপর অটোরিকশাটি কাভার্ডভ্যানে উঠানোর জন্য নির্জন স্থান খুঁজতে থাকে তারা। বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের কোট্টা বাজার এলাকায় এসে অটোরিকশাটি কাভার্ডভ্যানে উঠানোর চেষ্টা করে। তখন কোট্টা বাজারে কর্তব্যরত নাইট গার্ড আবুল কাশেম ও নাসিরের সন্দেহ হয়। তারা দু’জন ঘটনাস্থলের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে অটোরিকশাটি ফেলে আসামিরা কাভার্ডভ্যান নিয়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে কাভার্ডভ্যানটিকে বাড়বকুণ্ড বাজার এলাকা থেকে মোড় ঘুরিয়ে চট্টগ্রাম শহরের দিকে নিয়ে যায় আসামিরা। এক পর্যায়ে সোলায়মান আসামি ফরিদকে চিনে ফেলে। তখন সে ফরিদকে বলে, ‘আমি আর আপনি একই গ্যারেজে রিকশা রাখি। আপনি আমাকে চিনতে পারছেন? আমাকে ছেড়ে দেন।’ এরপর আসামিরা ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে ভিকটিম সোলায়মানকে কাভার্ডভ্যানের ভেতর বেল্ট দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে এবং লাশ মহাসড়কের পাশে ফেলে পালিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, গত ৩০ জুলাই সকাল ৮টার দিকে বার আউলিয়া হাইওয়ে থানার সামনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশ থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের (২৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।