সিবিটুয়েন্টিফোর নিউজ ডেস্ক: কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলা সমুদ্রসৈকত, নাফ নদীর তীর ও সেন্ট মার্টিন সমুদ্রসৈকতে জোয়ারের পানিতে গত দুই মাসে ১১ জনের লাশ ভেসে এসেছে। তবে তাঁদের কারও পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। পরে বেওয়ারিশ হিসেবে এসব লাশ দাফন করা হয়।
পুলিশের ভাষ্য, ভেসে আসা লাশগুলো স্থানীয় কোনো বাসিন্দার নয়। তবে তাঁদের পরনের পোশাক দেখে ধারণা করা হচ্ছে, তাঁরা রোহিঙ্গা হতে পারেন।
এদিকে বিবিসির বরাত দিয়ে ১১ আগস্ট প্রথম আলোর অনলাইনে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে ২৩ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। ৩০ জন নিখোঁজ হন। আর এখন পর্যন্ত জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে আটজনকে।
স্থানীয় লোকজনের ধারণা, যাঁদের লাশ ভেসে আসছে, নৌকাডুবিতে তাঁরা হয়তো নিখোঁজের তালিকায় আছেন।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জোবাইর সৈয়দ বলেন, নাফ নদী ও সমুদ্রসৈকত এলাকা থেকে উদ্ধার করা লাশগুলোর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ জুন থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় দুই মাসে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, হোয়াইক্যং, বাহারছড়া, সেন্ট মার্টিন ও উখিয়া উপজেলার ইনানী সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ১১ জনের লাশ ও মানবকঙ্কাল পাওয়া গেছে। ১৪ জুন টেকনাফে সাবরাং মুন্ডার ডেইল সমুদ্রসৈকতে এক নারীর লাশ পাওয়া যায়। ১৫ জুন উখিয়ার ইনানীর পাটোয়ারটেক পয়েন্ট থেকে মাথাবিহীন এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৬ জুন সেন্ট মার্টিনের হলবুনিয়া সমুদ্রসৈকতে ভেসে আসে একটি মানবকঙ্কাল। ৩ জুলাই টেকনাফের সাবরাং ট্যুরিজম পার্কসংলগ্ন সমুদ্রসৈকতে এক ব্যক্তির লাশ ভেসে আসে। ৮ জুলাই টেকনাফের হোয়াইক্যং নাফ নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ২০ জুলাই টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ঘোলার পাড়ায় সমুদ্রসৈকতে মানবকঙ্কাল পাওয়া গেছে।
২৭ জুলাই নাফ নদীর শাহপরীর দ্বীপে ভাসমান এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ২৯ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়ার উত্তর শিলখালী সমুদ্রসৈকতে ভেসে আসে এক ব্যক্তির কঙ্কাল। ৩ আগস্ট টেকনাফের সাবরাং কাটাবনিয়াখালের উত্তরে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের পাশে সমুদ্রসৈকতের জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা এক যুবকের লাশ। সর্বশেষ ১১ আগস্ট সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণপাড়ার হলবুনিয়া সমুদ্রসৈকতে জোয়ারের পানিতে ভেসে আসে দুই তরুণ-তরুণীর লাশ। সাবরাং থেকে তিনটি, শাহপরীর দ্বীপ থেকে দুটি, উখিয়া থেকে একটি, বাহারছড়া থেকে একটি, হোয়াইক্যং থেকে একটি, সেন্ট মার্টিন থেকে তিনটি লাশসহ মোট ১১টি লাশ ও মানবকঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রোহিঙ্গা তরুণ-তরুণী দালাল চক্রের প্রলোভনে পড়ে সমুদ্রপথে ট্রলারে করে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পাড়ি দিচ্ছেন। তরুণীরা বিয়ের আশায়, আর তরুণেরা ভালো চাকরির প্রলোভনে পড়ে সাগরে মারা যাচ্ছেন। তাঁদের লাশ হয়তো সমুদ্রসৈকতে ভেসে আসতে পারে। এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আশ্রয়শিবিরে প্রচার চালালেও কোনো কাজ হচ্ছে না। রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির, টেকনাফ, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াকেন্দ্রিক শক্তিশালী দালাল চক্র কাজ করছে।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের নাফ নদী ও সাগরে গত দুই মাসে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। তারপরও সাবরাং ও শাহপরীর দ্বীপের নাফ নদী এবং বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এলাকার জোয়ারের পানিতে ভেসে আসে পাঁচটি লাশ। নৌ পুলিশ লাশগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের ব্যবস্থা করেছে।’
কয়েক দিনের মধ্যে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের হলবনিয়া সমুদ্রসৈকতে তিনটি লাশ ভেসে এসেছে বলে জানিয়েছেন সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করা ব্যক্তিরা কেউ স্থানীয় বাসিন্দা নন। তাঁরা সবাই অজ্ঞাতনামা।’
টেকনাফের নৌ পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ চাঁন মিয়া ও সেন্ট মার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক সেলিম হোসেন জানান, গত দুই মাসে ১১টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া পাড়ি দিতে গিয়ে ট্রলারডুবিতে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) টেকনাফ শাখার সাধারণ সম্পাদক এ বি এম আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গা নারী-পুরুষেরা আশ্রয়শিবির থেকে বের হয়ে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করে থাকেন। প্রতিবছরই হাজার হাজার রোহিঙ্গা ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে মাছ ধরার নৌকায় গাদাগাদি করে বসে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, গত দুই মাসে টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন পয়েন্টে ভেসে আসা লাশগুলো রোহিঙ্গাদের। সূত্র: প্রথম আলো