টানা তিন দিনের ভারী বর্ষণে চকরিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

KKK e1693146843297
print news

কক্সবাজারের চকরিয়ায় টানা তিন দিনের ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। উজানে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে দু-এক দিনের মধ্যে আবারও বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এদিকে পৌরশহরে বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। সড়ক ও অলিগলিতে জমে রয়েছে পানি। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে উপজেলা বাসিন্দাদের।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। একইভাবে বৃষ্টি হচ্ছে চকরিয়ার উজান বান্দরবান জেলার আলীকদমে। এতে উপজেলার মাতামুহুরী নদী, খাল ও ছড়ার পানি বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চকরিয়া ও বান্দরবানের লামায় ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

উজানের আলীকদম থেকে পাহাড়ি ঢল নামার কারণে মাতামহুরি নদীতে পানি দ্রুত বাড়ছে। এদিকে মাতামুহুরি নদীতে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ রোববার দুপুরে নদীতে পানি ৪ দশমিক ২ সেন্টিমিটার অর্থাৎ বিপৎসীমার দেড় মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে গত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শহররক্ষা বাঁধ ও বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, গত তিন দিনের ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে উপজেলার বমুবিলছড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, ফাঁসিয়াখালী, লক্ষ্যারচর ও চকরিয়া পৌরসভার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া পৌরসভার শহীদ আব্দুল হামিদ পৌর বাস টার্মিনাল, পশ্চিম কোচপাড়া, বাটাখালী, বাস টার্মিনাল ও ভাঙারমুখ এলাকায় বৃষ্টির পানি দ্রুত নামতে না পারায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে গ্রামটির প্রায় ২ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে দক্ষিণ ছড়ারকুল ফাঁসিয়াখালী ছড়াখালের বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে পানি। ওই এলাকার তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

চকরিয়া পৌরসভার শহীদ আব্দুল হামিদ পৌর বাস টার্মিনাল এলাকার বাসিন্দা সোহেল মাহমুদ বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে এই এলাকার ২ শতাধিক পরিবার ভোগান্তিতে পড়েছে। আগে কোনো সময় এভাবে পানি জমে থাকেনি। কারণ বাস টার্মিনালের পেছনের কালভার্টের পানি চলাচলের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে।

সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান সুমন বলেন, ‘আগস্টের শুরুতেই বন্যার প্রভাব মানুষ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর মধ্যে কয়েক দিনের মুষলধারে বৃষ্টিতে মাতামুহুরি নদী দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল।’

ভারী বৃষ্টিতে চকরিয়া অধিকাংশ এলাকার নিম্নাঞ্চলে পানি জমেছে। রোববার পৌরসভার শহীদ আব্দুল হামিদ পৌর বাস টার্মিনাল এলাকায়।
ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন হেলালী বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢলে ফাঁসিয়াখালী ছড়াখালের দুইটি পয়েন্টে ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এতে অন্তত ৩ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

পাউবো চকরিয়া উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জামাল মোর্শেদ বলেন, ‘গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে মাতামুহুরি নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। আরও এক-দুই দিন ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উজানের আলীকদমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে পাহাড়ি ঢল নামছে। উজানে বৃষ্টি ও ঢল নামতে থাকলে মাতামুহুরি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে অতিক্রম করবে।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে জামাল মোর্শেদ আরও বলেন, ‘মাতামুহুরি নদীর বিপৎসীমা ধরা হয় ৫ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার। আজ রোববার দুপুরে নদীতে পানি প্রবাহিত হয়েছে ৪ দশমিক ২ সেন্টিমিটার অর্থাৎ বিপৎসীমার দেড় মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যদি বান্দরবানের আলীকদম ও লামায় বৃষ্টিপাত কমে, তাহলে দ্রুত পানি নেমে যাবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *