কক্সবাজারের উদীয়মান সংবাদকর্মী, সিবিটুয়েন্টিফোর নিউজের সম্পাদক ও জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ বুলেটিনের কক্সবাজার প্রতিনিধি মহিউদ্দিন মাহীকে শক্রতাবশত এপেন্ডিসাইটিসের অপারেশনে স্পাইনাল এ্যানেসথেসিয়া দিয়ে পঙ্গু করার ঘটনায় তদন্ত কমিটি আসছে আজ। কমিটিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের উপপরিচালক ডা. ইফতেখার আহমদ সভাপতি, চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের এ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট ডাঃ রাজদ্বীপ বিশ্বাস সদস্য সচিব, একই হাসপাতালের সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডাঃ বিজন কুমার নাথকে সদস্য করা হয়েছে। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ রাশেদা সুলতানা। তারই ধারাবাকিকতায় আজ শনিবার কক্সবাজার সদর হাসপাতালে অভিযুক্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমান, ডা. সুলভ আশ্চয্যসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিত থাকার জন্য পৃথক প্রজ্ঞান জারি করেছে তদন্ত কমিটি।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো: আলমগীর কবীরের লিখিত এক প্রজ্ঞাপনে ঢাকা মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনিস্টিউটের সহকারী পরিচালক পদে পদানবতি করা হয় তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমানকে। তিনি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপপরিচালক) পদমর্যদায় চাকরি করেছিলেন। সাংবাদিক মহিউদ্দিন মাহী তত্ত্বাবধায়ক মোমিনের বিরুদ্ধে গত ২২ জুলাই স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে তথ্য নির্ভর একটি লিখিত অভিযোগ করেন কক্সবাজারের জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল সিবিটুন্টিফোর এর সম্পাদক মহিউদ্দিন মাহী। তিনি সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার এর সদস্য ও জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ বুলেটিনের কক্সবাজার প্রতিনিধি ।
অভিযোগে তিনি লিখেন. ‘গত ১৮ জানুয়ারি এপেন্ডিসাইটিসের তীব্র ব্যাথা নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হন মাহী। ৫ দিন পর (২৩ জানুয়ারি) এপেন্ডিসাইটিসের অপারেশন করা হয়। সেই দিন অদক্ষ ও দায়িত্বহীন বেসরকারি ডাঃ সুলভ আশ্চর্য্যকে দিয়েই স্পাইনাল এ্যানেসথেসিয়া দেয়।
সাংবাদিক মাহী বলেন, আমাকে অপারেশনের দিন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বেসরকারি চিকিৎসক, কনসালটেন্ট নয় এমন ডাঃ সুলভকে দিয়ে এ্যানেসথেসিয়ায় ইচ্ছেকৃত ভুল করা হয়। যার কারণে টানা ৮ মাস ধরে বাম পা অবশ রয়েছে।
অপারেশনের মাস তিনেক আগে সদর হাসপাতালের সুপার ডাঃ মোঃ মোমিনুর রহমানের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে বক্তব্য গ্রহণ করেন মাহী। কোনো মিডিয়ায় সংবাদ না করতে হুমকি ও তার দেহরক্ষী হাসপাতালের পরিচ্ছন্ন কর্মী খুরশীদাকে দিয়ে কক্সবাজার সদর থানায় একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করানো হয়। এর আগেই সাংবাদিক মহিউদ্দিন মাহী আত্মরক্ষার্থে সদর মডেল থানায় হাসপাতাল সুপার মোমিনুর রহমান ও পরিচ্ছন্ন কর্মী খুরশিদাকে আসামি করে অভিযোগ দিয়ে রাখেন।
২০২২ সালের ৬ নভেম্বর স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান সাংবাদিক মাহী। ওই দিন হাসপাতালের আরএমও ডাঃ আশিকুর রহমানকে দিয়ে জোরপূর্বক হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোনো সংবাদ না লিখতে ও কোনো অভিযোগ না করতে লিখিত কাগজ নেয় মহিউদ্দিন মাহীর কাছ থেকে। আড়াই মাস পর মহিউদ্দিন মাহীর কাছ এপেন্ডিসাইটিসের তীব্র ব্যাথা শুরু হলে হাসপাতালের আউটডোর বিভাগে গিয়ে ডাক্তার দেখান। সেই দিন সাংবাদিক মাহী হাসপাতাল সুপারের আক্রোশ থেকে বাঁচতে শুধু মহিউদ্দিন ও বয়স কমিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। তারপরও হাসপাতালের সুপার মোমিনুর রহমানের আক্রোশ থেকে বাঁচতে পারেননি। অপারেশন কক্ষে মহিউদ্দিন মাহীকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে পঙ্গু বানিয়ে ফেলেন।
বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন মিডিয়া ও জাতীয় পত্রিকায় লেখালেখি হয়। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন তীব্র প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেন।
উল্লেখিত বিষয়টি নিয়ে প্রতিকার পেতে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুল চিকিৎসার শিকার মহিউদ্দিন মাহী। তার অভিযোগ আমলে নিয়ে হাসপাতাল সুপারকে বদলি ও তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।