আন্দোলনের নামে দুর্বৃত্তপনা করলে কিন্তু ছেড়ে দেবো না, বলে বিএনপিকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২১ অক্টোবর) বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন ও আইনজীবী মহাসমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আন্দোলন করছে, করুক। আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আন্দোলনের নামে দুর্বৃত্তপনা করলে কিন্তু ছেড়ে দেবো না।
তিনি বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। কেউ কারো ধর্মের ওপর আঘাত হানবে না। বাংলাদেশে যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা যত বেশি স্বাবলম্বী হবো, ততবেশি আইনজীবী থেকে শুরু করে সবার জন্য সুযোগ অবারিত করে দিতে পারবো। আসুন সবাই মিলে সেই বাংলাদেশ গঠনে কাজ করি। আপনারা মানুষের পাশে থাকবেন। যেখানেই অন্যায় দেখবেন, অন্যায়কারী যেন সাজা পায় সে জন্য কাজ করবেন।
সরকার প্রধান বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যেন কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা না হয়। মানুষের কল্যাণে আমরা কাজ করে যাই। আইনজীবীদের জন্য প্রতিটি জেলায় বিশেষ প্লটের ব্যবস্থা করে দেবো। সাথে সাথে আমার একটি অনুরোধ থাকবে আপনারা সার্বজনীন পেনশন স্কিম গ্রহণ করবেন। পাশাপাশি আপনাদের ফান্ড, যেটা জাতির পিতা করে দিয়েছেন, সেটাতে আমি ৩০ কোটি টাকা দেবো। আপনারাও সাধারণ আইনজীবীরা এতে কন্ট্রিবিউট করবেন।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে আমাকে আগেই গ্রেফতার করেছে। আমি কৃজ্ঞতা জানাই, যখন গ্রেফতার করেছে, আপনারা আইনজীবীরা পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রতিনিয়ত একটার পর একটা মামলা দিয়েছে। আমাকে হয়রানি করেছে। আমি কিন্তু টলিনি। নিম্ন আদালতের পাশাপাশি উচ্চ আদালতের আইনজীবীরাও পাশে ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করেছি। দুর্নীতির অভিযোগ এসেছিল, আমি চ্যালেঞ্জ করেছিলাম, দুর্নীতি করতে তো আসিনি। পরে এটা আদালতে মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে।
তিনি বলেন, স্মার্ট জুডিসিয়ারি করার উদ্যোগ হিসেবে ই-জুডিসিয়ারি চালু করেছি। জেলে ভার্চুয়াল কোর্ট বসানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আইনগুলো সংশোধন করে যুগোপযোগী করে দিয়েছি।
আরও পড়ুন>আইনজীবী মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী/ অগ্নিসন্ত্রাসের মামলার বিচার দ্রুত শেষ করতে হবে
শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি একটি দাবি আছে, আইনজীবী ভবন করে দেওয়ার। আর্থিকভাবে যত স্বচ্ছলতা আসবে, ধীরে ধীরে সব জেলায় এটা করে দিতে পারবো। তবে এখানে একটা শর্ত আছে, সেখানে আইনজীবীদের পক্ষ থেকেও ফান্ড থাকতে হবে। আপনারা একটা ফাণ্ড গঠন করেন, সেখান থেকে কিছু দেন আমিও কিছু দিবো।
এসময় ২০১৩-১৪ সালে বিএনপির জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনে দায়ের করা মামলার দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির দাবি জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই বিএনপি ক্ষমতায় এসে আমাদের কত নেতাকে হত্যা করেছে। ২০১৩ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করে আরো ভয়াবহ পরিবেশ তৈরি করেছে। এই অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে যারা জড়িত, সেই মামলাগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে, এটাই আমার অনুরোধ। তাদের শাস্তি কেনো দেরি হবে। আগে আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিল, এখন আন্দোলনের সুযোগে সামনে এসেছে। তাদের মামলায় যেন তারা সাজা পায়। এটা আপনাদের কাছে আমার দাবি।
সরকারপ্রধান বলেন, ২০০১ এ বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে বিএনপি-জামায়াত এসেছিল ক্ষমতায়। তারা দেশের অর্থপাচার করেছে। দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের দেশ বানিয়েছে। সারাদেশে বোমা হামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করেছে। বেঁচে গেছি, এটা ঠিক। কিন্তু তারা দেশে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য করেছে।
তিনি বলেন, খুনিদের জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় বসিয়েছেন। সে সময় আমি দেশে ফিরে আসি। দেখি, ক্ষমতাসীনরা উচ্ছ্বিষ্ট বিলিয়ে কিছু লোকের ভাগ্য উন্নয়ন করেছেন কিন্তু জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি। আমি গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে বেড়াই। মানুষের কষ্ট দুর্দশা দেখি। পরে ২১ বছর পর আমরা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করি। বিচার বিভাগের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিই।