বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফেরা এক পরিবারের সবাই নিহত
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চারজনের সবাই নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার রাজগাতি ইউনিয়নের বনহাটি গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে সুজন মিয়া, তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার, তাদের ছেলে সজীব মিয়া ও ইসমাইল মিয়া।
নিহত সুজনের ভাই স্বপন মিয়া জানান, সুজন মিয়া ঢাকার মোহাম্মদপুর তাজমহল রোড এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। সেখানে ভ্যানে ডাব বিক্রি করে সংসার চালান। গত শুক্রবার বড় ভাইয়ের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে বাড়িতে আসেন। অনুষ্ঠান শেষে আজ ট্রেনে করে ঢাকায় ফিরছিলেন। পথে দুর্ঘটনায় তার পরিবারের সবাই মারা যান।
এদিকে, তাদের সঙ্গে স্বপন মিয়াও ঢাকায় ফিরছিলেন। তবে দুর্ঘটনার সময় পাঁচ নম্বর বগিতে থাকায় বেঁচে যান তিনি।
বাজিতপুর উপজেলার দয়গাঁও বোর্ডবাজার এলাকার রনি জানান, নরসিংদীতে টেক্সটাইল মিলে চাকরি করেন। কয়েকদিন আগে স্ত্রী ও ৪০ দিনের শিশু সন্তানকে নরসিংদী নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়িতে আসেন। আজ নরসিংদী যাওয়ার পথে জগন্নাথপুর এলাকায় ট্রেন দুর্ঘটনায় তার বাবা নাসির উদ্দীন মারা যান। শিশু সন্তানসহ তারা অক্ষত আছেন।
ভৈররেব রাণীবাজার এলাকার শান্তী রাণী শীল জানান, তার স্বামী সবুজ শীল সোমবার দুপুরে নরসিংদী বালিয়ারচর বৌবাজার এলাকায় মেয়ের জামাইয়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। ট্রেন দুর্ঘটনায় তার স্বামী মারা যান।
ভৈরবের আগানগর এলাকার আরমান হোসেন জানান, তার ভাই আফজাল হোসেন ঢাকা কলেজ থেকে অনার্স শেষে সাউথ কোরিয়ার স্কলারশিপ পেয়েছেন। এক সপ্তাহ পর চলে যাওয়ার তারিখ ছিল। সোমবার বড় ভাই সাদ্দাম হোসেনের কর্মক্ষেত্র সৌদি আরবে যাওয়ার উদ্দেশ্য রাত ৯টায় ফ্লাইট ছিল। বড় ভাইকে এয়ারপোর্টে দিয়ে আসার জন্য দুপুরে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠেন। এরইমধ্যে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আফজাল হোসেন মারা যান।
ভৈরবপুর গ্রামের রিপা আক্তার বলেন, আমার ছেলে রাকিব মিয়া (১৩) শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার একটি পা নেই। সে ট্রেনে উঠে ভিক্ষা করতো। প্রতিদিনের মতো আজকেও ট্রেনে ভিক্ষা করতে বের হয়। দুর্ঘটনার সময় সে ট্রেনে ছিল। আমার ছেলে রাত ৯টা পর্যন্ত ঘরে না ফেরায় ছেলের সন্ধানে ভৈরব হাসপাতালে এসেছি। বেঁচে আছে কি না আমি জানি না।
কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের পাওয়া তথ্য মতে রাত ৯টা পর্যন্ত ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় ৭৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের মরদেহ শনাক্ত করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বজনদের কাছে দিয়ে দেওয়া হবে।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এটা খুবই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এ পর্যন্ত দুর্ঘটনায় ১৭ জন মারা গেছে। নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা করা হবে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স নিয়ে আসা হয়েছে। সর্বদা জেলা প্রশাসন কাজ করছে।
তিনি বলেন, এরইমধ্যে রাত ৯টায় দুর্ঘটনার শিকার তিনটি বগি রেখে ট্রেন ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গিয়েছে। দ্রুত ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখনো ক্ষতিগ্রস্ত বগির নিচে মরদেহ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ডিসি আরও বলেন, আমাদের উদ্ধারকাজ অব্যাহত আছে। উদ্ধার অভিযানে স্থানীয় প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট, ৯ প্লাটুন বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্যসহ স্থানীয় লোকজন সহযোগিতা করছেন।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, মালবাহী ট্রেনটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল। একইসময় ভৈরব থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল যাত্রীবাহী ট্রেন এগারসিন্ধুর। ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে ক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের শেষ দুই বগিতে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি। এতে যাত্রীবাহী ট্রেনের কয়েকটি বগি উল্টে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।