মহিউদ্দিন মাহী
বিশেষ প্রতিবেদক, সিবিটুয়েন্টিফোর নিউজ।
১৪০ বছর আগে ব্রিটিশ আমলে কক্সবাজার রুটে রেললাইনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু তাই নয়, কক্সবাজারে একদিনেই মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনসহ ৭টি বড় প্রকল্প নিয়ে ১৪টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (১১ নভেম্বর) কক্সবাজার রেলস্টেশনে আয়োজিত সুধী সমাবেশ এবং মাতারবাড়ি টাউনশিপ মাঠে আয়োজিত জনসভায় এসব প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি।
এর মধ্যে রয়েছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প, মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেল, সাব মেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়ার দ্বীপকে বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে সংযুক্তকরণ, বাঁকখালী নদীর ওপর কস্তুরাঘাট- খুরুশকুল সংযোগ সেতু, কক্সবাজার বিমানবন্দরের ভূমি ভরাট, প্রোটেকশন বাঁধ নির্মাণ, অ্যাপ্রোচ রোড ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজ, উখিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ডিজাইন ও স্থাপনকরণ, মহেশখালী গোরকঘাটা-শাপলাপুর জনতা বাজার সড়কের মজবুত ও প্রশস্তকরণ প্রকল্প, রামু কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কুতুবদিয়ায় কৈয়ারবিল আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, চকরিয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল হামিদ পৌর বাস টার্মিনাল সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, ঈদগাঁও জাহানারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, মহেশখালী ইউনুচখালী নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডিমিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প ও উখিয়া রতœাপালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় একাডেমিক ভবন নির্মাণ, মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যায়য়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প।
এসব প্রকল্প ছাড়াও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের প্রথম টার্মিনাল নিমার্ণ, টেকনাফ মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার রিসিলেন্ট শেল্টার কাম আইসোলেশন সেন্টার নির্মাণ, রামু উপজেলা জোয়ারিয়ানালা-নন্দাখালী সড়কে ১৮৪ মিটার দীর্ঘ গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ ও কক্সবাজার সদরে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ ( ৪র্থ পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় ভবন নির্মাণ প্রকল্পসহ চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মহেশখালীর মাতারবাড়ির জনসভায় আসার আগে বেলা ১টা ২০ মিনিটের দিকে আইকনিক রেল স্টেশনের প্রথম যাত্রী হিসেবে টিকেট কাটেন শেখ হাসিনা। এরপর প্ল্যাটফর্মে থাকা ট্রেনের কাছে যান তিনি। সেখানে রেলের নিয়ম অনুসারে সবুজ পতাকা নেড়ে ট্রেন ছাড়ার সংকেত দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর বাঁশিতে ফু দেন তিনি। ট্রেন ছাড়ার আগে জয় বাংলা ¯েøাগান দেন প্রধানমন্ত্রী। কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশন উদ্বোধনের পর ট্রেনে চেপে ২৬ মিনিটে কক্সবাজার থেকে রামু পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বেলা ১টা ২৮ মিনিটে কক্সবাজার স্টেশন থেকে ট্রেনটি রামুর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বেলা ১টা ৫৪ মিনিটে ট্রেনটি রামু স্টেশনে পৌঁছায়। ২৬ মিনিটের ট্রেন যাত্রায় অন্য বগিতে থাকা যাত্রীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।
ট্রেন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, “মানুষের কল্যাণে কাজ করব এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই। দীর্ঘদিনের দাবি ছিল কক্সবাজার রেলপথ। কক্সবাজারের আমাদের দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত আছে। অথচ পর্যটনকেন্দ্রটা ভালোভাবে গড়ে তুলতে পারিনি।
“মহেশখালী একেবারে অবহেলিত ছিল। বিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্র বন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সাথে সংযুক্ত হব, এটাই লক্ষ্য। এসব বিবেচনা করে রেলপথ করে দেবার সিদ্ধান্ত নিই। যেহেতু দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথ আগেই ছিল। রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত যাবে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সাথে যাতে এই রেলপথ সংযুক্ত হয় সে ব্যবস্থা করব।”
কক্সবাজার পথে রেল চলাচল মানুষের যাতায়াতের পাশাপাশি পর্যটন, পণ্য পরিবহন এবং অর্থনীতি ও জিডিপিতে অবদান রাখবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পদ্মা সেতুতে রেল আছে। যশোর, খুলনা হয়ে মোংলা পর্যন্ত রেল সংযোগ তো আছেই। একটা কাজ আমরা করতে চাই- পর্যটকদের জন্য একটা রেল থাকবে যেটা দেশের বড় বড় কটা স্টেশন ধরবে। অল্প সময়ে যাতে বড় শহরগুলো থেকে কক্সবাজার পৌঁছায়। সারাদেশের সাথে এই পর্যটক ট্রেন যুক্ত থাকবে। এটা পরিকল্পনা আছে আমাদের।”
এর আগে জনসভায় বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেকউল্লাহ রফিক ও জনসভার সভাপতি মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরী।
জনসভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই এলাহী চৌধুরী, জ্বলানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কক্সবাজারের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, চিফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী লিটন প্রমুখ।