বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন ডেনজার স্পিশিচ অব ফায়োনা অ্যান্ড ফ্লোরা’ বা সাইটিস। গত বুধবার (২২ নভেম্বর) সুইজারল্যান্ডের জেনেভা কনভেনশনের ৭৭তম সভায় সংস্থাটির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সম্মতিতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত হয়। ফলে বাংলাদেশ থেকে সাইটিস নির্ধারিত আর কোনো পণ্য রপ্তানি করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি সদস্য দেশগুলোকে বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি অবগত করে সাইটিসের নিয়ম মানার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি তারা বেশকিছু সুপারিশও করেছে।
বিশ্বব্যাপী বন্যপ্রাণী পাচার, আমদানি, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন ডেনজার স্পিশিচ অব ফায়োনা অ্যান্ড ফ্লোরা’ বা সাইটিস। বাংলাদেশ ১৯৮১ সালে এই সংগঠনের সদস্যপদ লাভ করে। এ জন্য তাদের নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয় বাংলাদেশকে।
সাইটিসের শর্ত মেনে চলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার সবসময় চেষ্টা করে। বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্যকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি’ মনে করে ‘সাইটিস চুক্তি’ বাস্তবায়নের ওপর জোর দেয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। গত ১২ অক্টোবর রাজধানীতে একটি হোটেলে এক সেমিনারে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ।
তবে হঠাৎ করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এখন বাংলাদেশকে সংস্থাটির শর্ত পরিপালনে আরও যত্নবান হতে হবে। সংস্থাটির দেওয়া শর্ত ঠিকভাবে পালন করে আগামী ৭৮তম সভার ৯০ দিন আগে প্রতিবেদন আকারে জমা দিলে, এই নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে পুনরায় বিবেচনা করা হবে।
সাইটিস নির্ধারিত পণ্যের মধ্যে স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী, উভচর প্রাণী, মাছ ও মেরুদণ্ডী প্রাণীসহ বেশ কয়েকটি বিষয় রয়েছে।
সাইটিস চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়ে থাকে। ১২ অক্টোবর সেমিনারে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘সাইটিসের বাস্তবায়ন, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা, জীবিকা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য উৎপাদনশীল বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য অপরিহার্য। দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য আমাদের অবশ্যই সাইটিসের চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।’
সেমিনারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. এস এম যোবায়দুল কবির বলেন, ‘দেশে টেকসই মৎস্য সম্পদ নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। মৎস্য বাণিজ্যে সাইটিস বাস্তবায়নে উন্নতি করার লক্ষ্যে অন্যান্য অধিদপ্তরের সঙ্গে কাজ করতে আমরা আগ্রহী।’
ওই সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন ডব্লিউসিএস গ্লোবাল শার্ক অ্যান্ড রে কনজারভেশন প্রোগ্রামের পরিচালক লুক ওয়ারউইক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইন সংশোধনের মাধ্যমে হাঙ্গর ও শাপলাপাতা মাছের তালিকা হালনাগাদ করা, আন্তঃসংস্থা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং উন্নত জনসচেতনতার মাধ্যমে সাইটিস বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় অগ্রগতি করেছে।’