দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা), ১৪ দলের শরিক এবং আরও অন্য দলগুলোকে মোট ৩৭টি আসনে ছাড় দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এসব আসনে দলটির প্রার্থীরা আজ রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন হওয়ায় এ দিনই স্পষ্ট হয়ে যাবে কোন কোন আসনে শরিক ও মিত্র দলগুলো ছাড় পেতে যাচ্ছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এবার জাতীয় পার্টি (জাপা) ২৬টি, ১৪ দলের তিনটি দল ৭টি এবং আরও চারটি দল ৪টি আসনে ছাড় পাচ্ছে আওয়ামী লীগের। এসব আসন নিয়ে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পর শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে দলটি।
জানা গেছে, বর্তমান সংসদে জাপার ১৯ এমপি এবং আগের দুই সংসদের সাবেক এমপিসহ নতুন ৭টি আসনে আওয়ামী লীগ ছাড় দিচ্ছে। এই ২৬ আসনে লাঙ্গলের প্রার্থীর সমর্থনে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করা হবে।
বর্তমান সংসদে ১৪ দলের ৪টি শরিক দলের ৮ জন সংসদ সদস্য আছেন। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির ৩ জন এমপি এবারও ছাড় পাচ্ছেন। জাসদের থাকা ৩ জন এমপি মধ্যে একজন বাদ পড়লেও নতুন করে আরেকটি আসনে ছাড় পাচ্ছে দলটি। জাতীয় পার্টির (জেপি) একজন এমপি আছেন, তিনি ছাড় পাচ্ছেন।
এ ছাড়া বর্তমান সংসদে ১৪ দলের শরিক তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে এমপি আছেন। তার আসনে এবার আওয়ামী লীগের নতুন মিত্র দল সুপ্রিম পার্টি ছাড় পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। নতুন নিবন্ধিত আরও তিনটি দল ৩টি আসনে ছাড় পাচ্ছে আওয়ামী লীগের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘আসন ছাড়ের ব্যাপারে আজই সব জানতে পারবেন।’
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘সিদ্ধান্ত অতি দ্রুতই জানতে পারবেন।’
এদিকে, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন হওয়ায় আজ রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) বৈধ প্রার্থীরা বিকাল ৪টার মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ সময়ের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে তাদের চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম জানিয়ে দিতে হবে। কোনও দল তার দলীয় প্রতীক জোটভুক্ত দলের কোনও প্রার্থীর অনুকূলে বরাদ্দ দিতে চাইলে সেটাও এ সময়ের মধ্যে করতে হবে।
গত ১৫ নভেম্বর ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি। ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে দেশের ৩০০ আসনে দুই হাজার ৭১৬ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তাদের মনোনয়নপত্র গত ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাই করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এতে ১ হাজার ৯৮৫ জনের প্রার্থিতা বৈধ এবং ৭৩১ জনের প্রার্থিতা অবৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। বৈধ ও অবৈধ প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে ৫৬০টি আপিল জমা হয়। এর মধ্যে ৬২৫টি আপিল পড়েছিল প্রার্থিতা ফেরত পেতে। বাকি ৩৫টি আপিল জমা পড়ে বৈধ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে। আপিলে প্রার্থিতা ফেরত পায় ২৮০ জন। পাশাপাশি রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া ৫ জন বৈধ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হয়। সব মিলিয়ে এ নির্বাচনে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৬০ জন। রবিবার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর এ নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত হবে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ২৯টি দলের মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। বিএনপি ও তাদের মিত্রসহ ১৫টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না।