কক্সবাজার স্বাস্থ্য সেবার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান সদর হাসপাতাল।সেখানকার কর্মকর্তা কর্মচারিদের নানা দুর্নীতি-দুর্নীতি ধরিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিক মাহী উদ্দিন মাহী। কিন্তু সেটা নিয়ে বেজায় চটেছিলেন তৎকালীন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধয়াক ডা. মোমিনুর রহমান। ব্যবস্থার পরিবর্তে তত্ত্বাবধয়াক ডা. মোমিনুর রহমানের সরাসরি দেখে নেওয়ার হুমকি কারনে থানায় অভিযোগ করেন সাংবাদিক মহিউদ্দিন।
এ অভিযোগই সাংবাদিক মহিউদ্দিনের জীবনের কাল হয়ে দাড়িয়েছে।সদর হাপতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন মহিউদ্দিন। ভুল চিকিৎসার কারনে তার বাম পা চিরতরে পঙ্গু হয়েগেছে এবং জীবন নিয়ে শংকায় পড়েছেন তিনি। বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য গিয়ে কোন কাজ হয়নি।
ভুক্তভোগী মহিউদ্দিন জানান, হাসপাতালের নানা অনিয়ম দুর্নীতির তার চোখে পড়ার কারনে গত ২০২২ সালে ৬ নভেম্বর হাসপাতালের তত্ত্বাবধয়াক ডা. মোমিনুর রহমানের কাছে গিয়ে ডকুমেন্টসহ তথ্য দেন। তিনি তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে সুইপার খোরশেদাকে দিয়ে মহিউদ্দিনতে হেনাস্থা করেন। এবং তত্ত্বাবধয়াক ডা. মোমিনুর রহমান তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। ঘটনার দিন তত্ত্বাবধয়াক ডা. মোমিনুর রহমান ও সুইপার খোরশিদার বিরুদ্ধে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।
এরপর ২০২৩ এর ১৮ জানুয়ারি পেটের ব্যাথা নিয়ে সদর হাসপালে ভর্তি হন মহিউদ্দিন। ২৩ জানুয়ারি তাকে এফেন্ডিসাইটের অপারেশন করেন। একজন অদক্ষ ডাক্তার দিয়ে ভুল অপারেশশনের কারনে তার বাম পা অবস্ হয়ে যায়। যার ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। মহিউদ্দিনের অভিযোগ, তত্ত্বাবধয়াক ডা. মোমিনুর রহমান ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে ভুল অপারেশন করে পঙ্গু করে দিয়েছেন।
তদন্ত কমিটি:
এদিকে মহিউদ্দিনকে দূর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও সাংবাদিক মহিউদ্দিন মাহীর চিকিৎসায় কোন অবহেলা হয়েছে কিনা তা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
তিন সদস্য বিশিষ্ট এই তদন্ত কমিটি বুধবার (৯ মে) সকাল ১১ টায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে তদন্তে আসছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ মোঃ মহিউদ্দিনকে প্রধান করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ সুমন মুৎসুদ্দি সদস্য সচিব ও এ্যানেসথেসিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ আজিজুল হককে সদস্য করা হয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৩৩৩/২০২৩/১৫২৬. ১৪/০৩/২০২৪ খ্রিঃ তারিখের স্বারকমূলে এই তদন্ত কমিটি গঠন করে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সূত্রমতে, কক্সবাজার সদর হাসপাতালে দায়িত্বকালীন সাবেক তত্ত্বাবধয়াক ডা. মোমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে দূর্নীতি, নিজের এলাকা লক্ষীপুর, ফেনী ও নোয়াখালী থেকে আত্বীয়-স্বজন এনে চাকরী দেয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন সাংবাদিক মহিউদ্দিন মাহী। এছাড়াও হাসপাতালের কর্মচারী খুরশিতাকে দিয়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট বানিজ্যের ব্যাপারে সু-নির্দিষ্ট প্রমাণ দেবার পরও সাংবাদিক মহিউদ্দিন মাহীকে উল্টো হুমকি দেন তৎখালীন তত্ত্বাবধয়াক ডা. মোমিনুর রহমান। বিষয়টি নিয়ে মহিউদ্দিন মাহী বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হাসপাতালের কর্মচারী খুরশিদা বেগম ও ডা. মোমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন। এই ঘটনার কয়েক মাস পর এপেন্ডিসাইটিসের পেটে তীব্র ব্যথা নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হউন মহিউদ্দিন মাহী।
২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারী ভর্তি হলেও ৫দিন অবহেলা করে ২৩ জানুয়ারী অদক্ষ ও উচ্চতর ডিগ্রিহীন বেসকারী ডাঃ সুলভ আশ্চর্য্যকে দিয়ে এ্যানেসথেসিয়া দেয়ার ব্যবস্থা করেন হাসপাতাল তত্ত্বাবধয়াক ডা. মোমিনুর রহমান। সম্পূর্ন উদ্দেশ্যে প্রনোদিত ভাবে ওইদিন অপারেশনে মাহীকে এস্পাইনাল কডে অস্বাভাবিক ভাবে দুইবার আঘাত করা হয়। ওইদিনের পর থেকে মহিউদ্দিন মাহীর বাম পা সম্পূর্ণ অবশ হয়ে যায়। স্থানীয় সাংবাদিকদের চাপের মুখে বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করলে মেডিকেল বোর্ডের গঠন করেন তৎখালীন তত্ত¡াবধয়াক ডা. মোমিন। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকগণ মতামতা দিয়েছেন অপারেশনের পর থেকে মহিউদ্দিন মাহীর পা অবশ হয়েছে। দীর্ঘ দেড় বছর ধরে মহিউদ্দিন মাহী দেশে ও দেশের বাইরে চিকিৎসা গ্রহণ করার পরেও সুস্থ হয়নি। তার একটি পা অবশ হবার কারণে শারিরীক ভাবে আরো নতুন নতুন রোগ তৈরি হয়েছে। ডাইভারকোলাটাইটিস রোগে সম্প্রতি ঢাকার কক্সবাজারের ইউনিয়ন হাসপাতাল ও বিআরবি হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন মহিউদ্দিন মাহী।
এদিকে দৈনিক সমুদ্রকন্ঠের প্রধান প্রতিবেদক ও জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ বুলেটিনের কক্সবাজার প্রতিনিধি মহিউদ্দিন মাহী প্রতিকার পেতে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর গত কয়েক দিন আগে হাইকোর্টে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রিট দায়ের করলে মহামান্য হাইকোটের বেঞ্চ সাংবাদিক মহিউদ্দিন মাহীকে ১০ কোটি টাকা কেন ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না জানতে চান। পাশাপাশি ৩০ দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিকে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। তারই অংশ হিসেবে ৯মে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে তদন্ত করবেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত টিম।