মোঃ ইব্রাহিম খলিল:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একের পর এক দেখা যাচ্ছে নিখোঁজ সংবাদ। বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজ থেকে দেয়া শিশু কিংবা বিভিন্ন বয়সি ছেলে-মেয়ে নিখোঁজের পোস্টে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। নিখোঁজের সত্যতা যাচাই না করেই এসব পোস্ট শেয়ার দিচ্ছেন নেটিজেনরা। এতে করে ছড়িয়ে পড়ছে গুজব।
তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে একের পর এক শিশু নিখোঁজের ঘটনা ভিত্তিহীন। যারা হারিয়ে গেছে বলে পোস্ট দেয়া হয়েছিল, পরে তাদের অনেককেই খুঁজে পাওয়া গেছে। আবার পাওয়া গেলেও সেটি আর জানানো হচ্ছে না। এদিকে, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে অভিভাবকদের মনে।
হেল্প ইন চট্টগ্রাম নামের একটি গ্রুপে পোস্ট করে এ জে আব্দুল্লাহ নামে একজন লিখেন, ‘আমার ফ্রেন্ডের বোনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । তার নাম উম্মে অবতাহি, বয়স ১৪। দুপুর ১টা ২০ থেকে দেড়টার সময় সি ডি ডি এল স্কুল থেকে বের হয়ে আর বাসায় ফেরেনি। তার পরনে ছিল স্কুলড্রেস। তাকে ওয়াসার গলিতে দেখা গেছে, এরপর আর খোঁজ মিলছে না।’ এই পোস্টটি মুহূর্তে ভাইরাল হতে দেখা যায়।
গ্রুপটিতে মাহেরোজ মুহারিব আফফান নামের আরেকজন পোস্ট করেন, ‘নিজ বাসা থেকে স্কুলে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয় পটিয়ার ১৭ বছর বয়সি মুসতাসরিন চৌধুরী আলিসা।’ দ্রুত সময়ে এই পোস্টটিও ভাইরাল হতে দেখা যায়।
চট্টগ্রাম গ্রুপ নামে একটি পেজে মো. নওশাদ নামে একজন পোস্ট দেন, ‘গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকাসহ চট্টগ্রামে ৪৮ বাচ্চা নিখোঁজ।’
চিটাগাং ইউনিভার্সিটি নিউজ নামে একটি পেজ থেকে পোস্ট দেয়া হয়, ‘গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকাসহ চট্টগ্রামে ৩৫ বাচ্চা নিখোঁজ।’
চট্টগ্রাম গ্রুপ নামের পেজে মো. উসামা নামে একজন পোস্টে লিখেন, ‘গত এক সপ্তাহে দেশে ১৫০ এর অধিক মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী নিখোঁজ।’
৮ জুন সকালে চান্দগাঁও এলাকায় আরাকান সড়কের একটি মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ হয় ৯ বছর বয়সী শাওয়াল শরীফ সাদমান। তার নিখোঁজের বিষয়টি জানাজানি হলে স্বজনরা ফেসবুকে চট্টগ্রাম ভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করতে থাকেন। এ ঘটনায় আরাফাত উদ্দিন নামের একজন ডেসপারেটলি সিকিং চট্টগ্রাম নামের গ্রুপে পোস্ট করে শিশুটির সন্ধান চান। তবে ওইদিন রাতেই শিশুটিকে পাওয়া গেলেও তিনি সেই তথ্য আর জানাননি।
গুজব থেকে সচেতন হতে সাইদুজ্জামান অন্তর নামের একটি পেজ পোস্ট দিয়ে জানানো হয়, ‘ফেসবুকে আপনারা অনেকেই নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তির পোস্ট শেয়ার করছেন। যেগুলো শেয়ার করছেন তাদের কয়েকজন ছাড়া বাকি সবাইকে পাওয়া গেছে। নতুন করে দেখা যাচ্ছে অনেকে গ্রুপ বা পেজে শেয়ার করছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৩৫ নাকি কতজন নিখোঁজ, এটা পুরাই ভিত্তিহীন। অহেতুক গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। এটা কিন্তু সাইবার ক্রাইম। অনেকে সত্যটা না জেনে এরকম পোস্ট করে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করছেন। সবাই এসব পোস্ট রিমুভ করুন।’
এমন নিখোঁজের খবরে আতঙ্কিত হয়ে ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে পোস্ট করেন নাজমা হক নামের এক নারী। তিনি লিখেন, ‘হঠাৎ ছেলে-মেয়ে হারানোর পরিমাণ বেড়ে গেছে মনে হচ্ছে। বিষয়টি শঙ্কার। সবাইকে সাবধানে থাকার অনুরোধ করছি।’
একের পর এক শিশু নিখোঁজের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার অতনু চক্রবর্তী বলেন, ‘এ ধরনের শিশু নিখোঁজের বহু পোস্ট আমাদের চোখে পড়েছে। তবে বিষয়টি গুজব মনে হচ্ছে। কারণ, এত শিশু নিখোঁজ হলে থানায় নিশ্চয় অভিযোগ আসতো।’
না জেনে কোনো কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকারও আহ্বান জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।