চট্টগ্রামে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) মুরাদপুর এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষ চলাকালীন বেশ কয়েকজনকে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখেছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। শুধু তাই নয়, সংঘর্ষে নিহত তিন জনের মধ্যে দুই জনই মারা গেছেন গুলিবিদ্ধ হয়ে। সংঘর্ষে অংশ নেওয়া চার অস্ত্রধারীর ছবি ও ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। এতে অস্ত্র হাতে থাকা লোকদের গুলি করতেও দেখা গেছে। অস্ত্রধারীদের নিয়ে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করা হচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দাবি, অস্ত্রধারী সবাই ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মী। অপরদিকে, আওয়ামী লীগের দাবি অস্ত্রধারীরা কোটা আন্দোলনের শিক্ষার্থী। পুলিশ বলছে, অস্ত্রধারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সংঘর্ষে তিন জন নিহত এবং শতাধিক আহত হন। নিহত তিন জনের মধ্যে মো. ওমর ফারুক (৩২) ও ফয়সাল আহমেদ শান্ত (২৪) মারা গেছেন গুলিবিদ্ধ হয়ে এবং ওয়াসিম আকরাম (২৩) মারা গেছেন আঘাতে। এছাড়া গুলিতে আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া অস্ত্র হাতে মাথায় হেলমেট এবং টি-শার্ট পরা যুবকের পরিচয় মিলেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর যুবলীগের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, ছবিটি ফিরোজ আলম নামে এক যুবকের। তিনি নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দেন। ছবিতে তার হাতে একটি ‘রিভলভার’ দেখা যায়। তার ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, সংঘর্ষ চলাকালীন একের পর এক গুলি করছে। এক পর্যায়ে গুলি থামিয়ে তাকে বলতে শোনা যায় ‘গুলি দে, গুলি দে’। কিছুক্ষণ পর একজন এসে গুলি এনে দেয় তাকে। গুলি লোড করার পর আবারও ছোড়েন।
ফিরোজ ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি ও ২০১৩ সালের জুলাই মাসে অস্ত্রসহ দুইবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। নগরীর মোহাম্মদপুর এলাকার ত্রাস হিসেবেও পরিচিত এ ফিরোজ। চট্টগ্রামের আলোচিত তাসফিয়া আমিন হত্যা মামলার অন্যতম আসামিও তিনি। তবে এ বিষয়ে জানার জন্য ফিরোজ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘আমার হাতে অস্ত্র ছিল না। অস্ত্র হাতে ওই ব্যক্তি আমি নই, অন্য কেউ।’
এছাড়া শর্টগান নিয়ে গুলি করা অবস্থায় ছবির ব্যক্তির নাম দেলোয়ার। তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সংগঠক। অপর দুই জন মিঠু ও জাফর। তাদের হাতেও ছিল রিভলভার। এ দুই জনই যুবলীগের কর্মী বলে জানা গেছে।
কোটাবিরোধী আন্দোলনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর বিভাগীয় সমন্বয়ক মো. সৈয়দ হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগ পুলিশের ছত্রছায়ায় আমাদের সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা করে ও গুলি চালায়। প্রশাসন ছাত্রলীগকে প্রটেকশন দিয়েছে। পুলিশের সামনেই তারা অস্ত্র, রামদাসহ নানা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে। অথচ পুলিশ ছিল নির্বিকার।’
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া উপকমিটির সদস্য নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ-যুবলীগের কেউ অস্ত্র হাতে ছিল দেখিনি। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ছদ্মবেশে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের লোকজন অস্ত্র হাতে গুলি করেছে। আমাদের ১৫ জন কর্মীকে ছয় তলা ভবনের ছাদ থেকে ফেলে গুরুতর আহত করেছে। সাত জন কর্মী বর্তমানে আইসিইউতে আছে। একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং সংবাদ মাধ্যমে বেশ কয়েকজনের আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ছবি প্রকাশ হয়েছে। এছাড়াও সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ দেশে আগ্নেয়াস্ত্র বহনকারীদের পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সংঘর্ষ যেভাবে শুরু হয়
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকাল তিনটায় নগরীর ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশনে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের। সেখানে যাওয়ার আগেই ষোলশহর স্টেশন দখল করে রাখে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা। ষোলশহর স্টেশনে যেতে না পেরে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন নগরীর মুরাদপুর এলাকায়। সেখানেও ছাত্রলীগ-যুবলীগ অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাঁধে।
সূত্র-বাংলা ট্রিবিউন।