কক্সবাজার সদর থানায় এজাহার দায়ের করতে গিয়ে নিজেই আসামি হয়ে কারাগারে প্রেরিত হয়েছেন সাদ্দাম হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তার পরিবারের দাবি, ন্যায় বিচারের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে গেলে উল্টো অন্যায়ভাবে বাদীকে মামলায় ফাঁসিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর মাধ্যমে তারা সুবিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ন্যায়বিচারের মধ্য দিয়ে সাদ্দাম হোসেনের অবিলম্বে মুক্তি চায় পরিবার।
সাদ্দাম হোসেনের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসকের অনুমোদিত ০১/০১/১৯৫০ ইং তারিখের ওয়াকফনামা দলিল যার ওয়াকফ এস্টেট, ইসি নং-১৮৭৪৬। ওই ওয়াকফ এস্টেট মোতওয়াল্লী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী থেকে জিয়াউল হক গত ৩০/১২/২০২১ ইং তারিখ সম্পাদিত চিংড়ি চাষের ইজারা চুক্তিপত্র মূলে ১৩৫.০০ একর এবং গত ০৪/০৪/২০২৪ ইং তারিখে সম্পাদিত চিংড়ি চাষের ৩ বছরের ইজারা চুক্তি পত্র মূলে ১৬০,০০ একর জমি ইজারা গ্রহন করে দীর্ঘ বছর ধরে খাজনা আদায়সহ শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ দখল করে আসছে। ওই জমি সাদ্দাম হোসেন ০১/০৬/২০২৪ ইং তারিখ থেকে আগামী ৩১/১২/২০২৫ ইং পর্যন্ত জিয়াউল হক থেকে উপ-ইজারা নেন। উভয় পক্ষের চুক্তি মতো জায়গাতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ দখল করে আসছে সাদ্দাম হোসেন।
কিন্তু গত ১৯/১০/২০২৪ ইং রাত ১২ টা ২০ মিনিটের দিকে ১ থেকে ১৮ জন সন্ত্রাসী সাদ্দামের ইজারাকৃত জমিতে অবৈধভাবে জোরপূর্বক অনুপ্রবেশ করে একাধিক ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। এসময় কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদণ্ডী ইউনিয়েনর ৪ নম্বর ওয়ার্ড, পশ্চিমপাড়ার ফোরকানের ছেলে মো. শাকিল (৩৫), ৩ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ পাড়ার মৃত লাল মোহাম্মদের ছেলে জাকির (৪৫), মৃত ওবাইদুল হকের ছেলে জাহেদ (৩৫)সহ অন্যানা সন্ত্রাসীরা ভারী অস্ত্রসহ আমার চিংড়ি ঘেরের শ্রমিকদের গুলি করে ও দা দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। এবং শ্রমিকদের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করে চিংড়ি ঘেরের সুইচ গেইটে জাল দিয়ে প্রায় ১৬০ মন চিংড়ি সহ অন্যান্য প্রজাতির মাছ ধরে নিয়ে যায়। চিংড়ি ঘেরে রক্ষিত টং ঘরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পরিবারের সদস্যরা আরো অভিযোগ তুলে বলেন, অন্যান্য অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা হলেন, চৌফলদণ্ডী ইউনিয়েনর ৪ নম্বর ওয়ার্ড, পশ্চিমপাড়ার মৃত আব্দুস শুক্কুরের ছেলে মো. আলম (৪৫), কবির আহমদের ছেলে লালু (৪০), ফোরকানের ছেলে সাইদী (২৫), আব্দুর রশিদ (৪৫), দক্ষিণপাড়ার আবু তাহেরের ছেলে সানু (২৫), আব্দু ছোবহানের ছেলে নুরুল আলম (৪৫), লাল মোহাম্মদের ছেলে হাকিম (৩২), মাইজপাড়ার জাফরের ছেলে ফাহাদ (৩৭), ওবাইদুল হকের ছেলে ইব্রাহিম (৩৫), দক্ষিণপাড়ার গুরা মিয়ার ছেলে সাহাব উদ্দিন (২৫), জকিরের ছেলে সাইমুন (২০) আব্দুর রশিদের ছেলে রাজ্জাক (২১), দক্ষিণপাড়ার আশরাফ আলীর ছেলে মো. কালু, পশ্চিমপাড়ার কবির আহমদের ছেলে একরাম (৩৫)।
তারা ঘটনার সময় চিংড়ি ঘেরের শ্রমিকদের গাছের খুটির সাথে পেছনে হাত দিয়ে মুখে গামছা পেছিয়ে বেঁধে রাখে। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল, মাছ ধরার জাল, ঘোনায় রক্ষিত সৌর বিদ্যুতের যন্ত্রাংশসহ আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার মালামাল ডাকাতি করে নিয়ে যায়। তারা একযোগে সাদ্দামের ইজারাকৃত চিংড়ি ঘেরের মাছ ও টাকা না দিলে শুষ্ক মৌসুমে লবণ নিয়ে যাওয়াসহ আমি ও ইজারাদারকে অপহরণ ও হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি দেয়।
এদিকে আহত শ্রমিকদের হাসপতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা চলাকালীন ভুক্তভোগী সাদ্দাম হোসেন গত শনিবার (১৯ অক্টোবর) হামলাকারীদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করতে থানায় গেলে তাকে উল্টো মামলা দিয়ে সাদ্দামসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠান। দুইজন জামিনে বের হলেও এখনো সাদ্দাম হোসেন ও সরওয়ার কামাল কারাগারে রয়েছেন। কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট তদন্ত বা শুনানি ছাড়াই তাদের দ্রুত কারাগারে প্রেরণ করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
সাদ্দাম হোসেনের স্ত্রী রোমেনা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী ন্যায় বিচারের আশায় থানায় গিয়েছিলেন, কিন্তু উল্টো তাকেই কারাগারে পাঠানো হলো। এটি সম্পূর্ণরূপে অন্যায় ও অবিচার। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়জুল আজিমের মুঠোফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে কল এবং খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া না পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এখনও ন্যায় বিচারের আশায় বুক বাঁধছেন এবং এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।