রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোর দুই শতাধিক ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে ওই এলাকাগুলোতে অপরাধী শনাক্তে বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। এই সুযোগে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করে যাচ্ছে দুষ্কৃতকারীরা।
পুলিশ ও অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু অপরাধী শনাক্ত কিংবা রহস্য উদঘাটন করার ক্ষেত্রেই নয়, অপরাধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও সিসি ক্যামেরার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। গত বছর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দুই হাজার ১০০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে ডিএমপি। বেশির ভাগ ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করা হয় গুলশান থানায় স্থাপিত একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক, সমিতি কিংবা সংগঠনের পক্ষ থেকে নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে নিজ উদ্যোগে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছেন।অপরাধী শনাক্তের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে এসব ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করে পুলিশ।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু সিসি ক্যামেরা নষ্ট করে ফেলে দুর্বৃত্তরা। তার মধ্যে মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, রামপুরা, ভাটারা, মিরপুর, উত্তরা, মতিঝিল ও যাত্রাবাড়ী এলাকার বেশির ভাগ সিসি ক্যামেরা নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। ফলে অপরাধী শনাক্তে বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।
ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, গত জুলাই-আগস্টে বেশ কিছু সিসি ক্যামেরা ধ্বংস করা হয়। সংখ্যায় প্রায় ২০০। এগুলো মেরামতের কাজ চলছে।
রাজধানীতে পুলিশের স্থাপন করা দুই হাজার ১০০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য রাস্তার মোড়, ইন্টারসেকশন, প্রবেশ-বাহির পথ, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা-কেপিআইসংলগ্ন পয়েন্টে এসব সিসি ক্যামেরা চালু রয়েছে।
২০১২ সালে ডিএমপি কমিশনারের উদ্যোগে রাজধানীতে সিসি ক্যামেরা প্রকল্প চালু হয়। সে সময় সম্পূর্ণ বেসরকারি অর্থায়নে ‘ল অ্যান্ড অর্ডার কো-অর্ডিনেশন কমিটি’ বা এলওসিসি নামের একটি ট্রাস্ট গড়ে তোলা হয়। ট্রাস্টের অধীনে গুলশান, বনানী, নিকেতন, বারিধারা ও ডিওএইচএস এলাকায় এক হাজার ৪০০টি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। গুলশানে একটি আধুনিক মনিটরিং সেন্টার স্থাপন করে সেখান থেকেই মনিটর করা হয়। এ ছাড়া স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর কমিটির মাধ্যমে প্রশাসনিক কাজ ডিএমপির অপারেশনস বিভাগ, আইসিটি বিভাগ ও এমআইএস শাখার মাধ্যমে নবাব আব্দুল গনি রোডে সেন্ট্রাল কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার থেকে মনিটরিং করা হয় সাত শতাধিক সিসি ক্যামেরা।জানতে চাইলে অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল যুগে সিসি ক্যামেরার এমন দশার পেছনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সদিচ্ছাই মূলত দায়ী। ঢাকার মতো জনবহুল শহরে অপরাধ প্রবণতাও বেশি। তাই গুরুত্বপূর্ণ সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনা ঘিরে শতভাগ ক্যামেরার আওতায় আনা জরুরি। অন্যথায় অপরাধীরা অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে।