বিশেষ প্রতিবেদক
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে গড়ে ওঠা একপ্রকার অঘোষিত দালাল সিন্ডিকেটের পতন ঘটেছে। জেলা প্রশাসনের সরাসরি হস্তক্ষেপে ভেঙে পড়েছে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের নেতৃত্বাধীন ‘সুগন্ধা সিন্ডিকেট’।
এই সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে সৈকতের হকার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং পর্যটনকেন্দ্রিক নানা কর্মকাণ্ডের ওপর একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করে আসছিল। প্রশাসনিক অনুমতি, ব্যবসার জায়গা বরাদ্দ, এমনকি ব্যবসা টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রেও দালাল ছাড়া কিছুই সম্ভব ছিল না—এমনটাই দাবি করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসার নামে শোষণ চলত বছরজুড়ে
স্থানীয় সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় পরিচালিত এই সিন্ডিকেট সাধারণ ব্যবসায়ীদের ব্যবসা শুরু করতে দিত না। নতুন উদ্যোক্তারা নানা রকম আর্থিক ও রাজনৈতিক চাপে ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়তেন।
অন্যদিকে, স্থায়ী ব্যবসার জন্য প্রশাসনের দেয়া কার্ড পেতে গেলে যেতে হতো ওই সিন্ডিকেটের প্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হয়ে।
জেলা প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপে বদল
চলতি অর্থবছরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, সৈকতের ব্যবসায় কোনো ধরনের দালাল বা সিন্ডিকেটকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। কার্ড নবায়নে দালালদের সম্পৃক্ততা রোধে নেয়া হয় দৃঢ় পদক্ষেপ।
জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাফিস ইনতেসার নাফি জানান, “এবার ব্যবসায়ীদের সরাসরি উপস্থিতিতে অনুমতি নবায়নের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে দালালদের মাধ্যমে কার্ড নবায়নের সুযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে।”
দালালরা ছিটকে পড়ছে, হকারদের মধ্যে স্বস্তি
সূত্রমতে, প্রশাসনের এই উদ্যোগে বহু সিন্ডিকেটভুক্ত ব্যবসায়ী কার্ড নবায়নের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। কেউ কেউ আত্মগোপনে চলে গেছেন, আবার কেউ বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে জেলা প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতে এসব অপচেষ্টা সফল হয়নি।
প্রকৃত হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এখন প্রশাসনের কাছে সরাসরি গিয়ে ব্যবসার অনুমতি পাচ্ছেন। এতে ব্যবসার পরিবেশে ফিরছে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার।
‘স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ গড়ার চেষ্টা’
জেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তার ভাষ্য, এই উদ্যোগ কেবল দালালমুক্ত পরিবেশ তৈরিই নয়, বরং পর্যটন কেন্দ্রিক অর্থনীতিতে অংশগ্রহণমূলক কাঠামো প্রতিষ্ঠার জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা চাচ্ছি স্বচ্ছ ও দালালমুক্ত পর্যটন ব্যবসা গড়ে তুলতে। সাধারণ ব্যবসায়ীদেরই এবার গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।” জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, “পর্যটনখাতে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। কোনো অনিয়ম বা নেতিবাচক অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
জনমতে প্রশংসিত প্রশাসনের উদ্যোগ
সৈকতের সচেতন ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজ জেলা প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, দালালচক্রের আধিপত্য থেকে মুক্ত হয়ে এখন সত্যিকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সুবিধা পাচ্ছেন।
এতে শুধু সৈকতের বাণিজ্য নয়, বরং কক্সবাজারের পর্যটন খাতেই ফিরতে পারে এক নতুন ধারা—স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ন্যায়ের।
মন্তব্য করুন