আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ৩ বছরের সর্বনিম্নে

images 4
print news

আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম এখন তিন বছরের সর্বনিম্নে। বিশ্বব্যাংকের নিয়মিত মাসিক প্রতিবেদনের (পিংক শিট) ফেব্রুয়ারি সংস্করণের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির গড় মূল্য নেমে এসেছে প্রতি টন ৯৭১ ডলারে।

তবে সয়াবিন তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতনের কোনো প্রভাব পড়েনি দেশের বাজারে। উল্টো খুচরা পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশিতে বিক্রি করছেন। গত মাসেও সরকারের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে লিটারে ৪ টাকা। ব্যবসায়ীদের দাবি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের মূল্যহ্রাসের সুফল পাচ্ছে না বাংলাদেশ।
পিংক শিটের তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের গড় মূল্য ছিল ১ হাজার ৩৮৫ ডলার। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ১ হাজার ৬৬৭ ডলার। ২০২৩ সালে গড় মূল্য নেমে আসে ১ হাজার ১১৯ ডলারে। বছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) তা ১ হাজার ১০৫ ডলারে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের নভেম্বরে দাম ছিল টনপ্রতি ১ হাজার ১১৮ ডলার। ডিসেম্বরে তা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৬২ ডলারে। সর্বশেষ গত মাসে বাজারদর আরো কমে ৯৭১ ডলারে স্থির হয়েছে।
তবে দেশের বাজারে এর উল্টো প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরে বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। এরপর জানুয়ারিতে কোনো ঘোষণা ছাড়াই প্রতি লিটারে দাম ৪ টাকা বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে রাজধানীতে খুচরা বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৩ টাকায়। আর খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫৮-১৬৫ টাকায়।
প্রতি মাসেই ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। তবে সেপ্টেম্বরের পর থেকে কোনো নতুন দর নির্ধারণ করা হয়নি।
দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম যে হারে কমেছে, দেশের বাজারে সে হারে কমেনি। মূলত বিশ্ববাজারে দাম কমে যাওয়ার কারণে আমদানিকারক পর্যায়ে এসও (সরবরাহ আদেশ) বিক্রি কমিয়ে দেয়ায় বাজারদর আশানুরূপ কমছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারি পর্যায়ে মণপ্রতি সয়াবিন তেল লেনদেন হচ্ছে ৫ হাজার ৮০০ থেকে ৫ হাজার ৯০০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগেও প্রতি মণের দাম ছিল ৬ হাজার ১০০ টাকা। আসন্ন রমজানের আগে ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীলতায় রাখতে শুল্ক কমানোর পাশাপাশি বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশের বাজারের দাম সমন্বয়ে ট্যারিফ কমিশনসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে এটা সত্য। দাম কমে যাওয়ার পর আমদানিকারকরা দাম সমন্বয়ও করেছে। কিন্তু ২০২১ সালের তুলনায় দেশে ডলারের দাম অন্তত ৪৫ টাকা বেশি। তাছাড়া রমজান কিংবা বৈশ্বিক সংকটকালে সরকার আমদানি শুল্ক কমিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। ডলার সংকটের কারণে ছোট ছোট এলসি খুলে আমদানি করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে সরকার যদি সহযোগিতা করে তবেই দাম সমন্বয় করা সম্ভব।
বর্তমানে খাতুনগঞ্জে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৬৭-১৬৮ টাকা। যদিও সয়াবিনের বুকিং দর যখন ২ হাজার ডলার ছিল, তখনো বোতলজাত এক লিটার সয়াবিনের দাম ছিল ২০০ টাকার কাছাকাছি। আমদানি মূল্য অর্ধেকেরও বেশি কমে গেলেও খুচরা মূল্য কমেনি। দাম যথাযথভাবে সমন্বয় করা না গেলে নিত্যপণ্যের বাজার আরো অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেই ডলারের বিপরীতে টাকার অবনমন একটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে। কেউ কেউ অনেক ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক দরেও কিনতে পারছে না। এখন ডলারের দাম কত শতাংশ বেড়েছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কত শতাংশ কমেছে, তার একটি হিসাব আমরা করতে পারি। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ ও সাম্প্রতিক সময়ে হুথিদের আক্রমণের কারণে জাহাজ ঘুরে আসতে হচ্ছে, তা বিবেচনায় একটি হিসাব করা যেতে পারে। কিন্তু সাধারণভাবে আমরা দেখি আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য যখন কমে আমাদের স্থানীয় বাজারে তার প্রতিফলন আনুপাতিক হারে হয় না। সেদিক থেকে আরো তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ হলে ভালো হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *