কোটা সংস্কারের আন্দোলনে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) সায়েকুজ্জামান ফারুকীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ছাড়া মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে তাজহাট থানায় মামলা করেছে তাজহাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিভুতি ভূষণ।
বুধবার (১৭ জুলাই) রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন কালবেলাকে বিষযটি নিশ্চিত করেছেন।
বেরোবির শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি, পুলিশের মামলা
বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদের জানাজায় হাজারো মানুষ
এ দিকে বুধবার সকাল ৯টার দিকে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিততে জানাজা শেষে সকাল ১০টার দিকে আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন হয়। জানাজায় আবু সাঈদের বিক্ষুব্ধ সহপাঠী, বন্ধু, শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা অংশ নেন।
আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশকে দায়ী করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। একই সঙ্গে পুলিশের বাড়াবাড়ি দাবি করে বুধবার দুপুরে বিশ্বিবদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থন কর্মসূচি শেষে কালো ব্যাচ পড়ে মৌন মিছিল করেন তারা।
দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় বেগম রোকেয়ার ১ নম্বর গেটকে ‘শহীদ আবু সাঈদ তোরণ’ নামে নামকরণ ও ৬ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা জানান, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদত্যাগ, অবিলম্বে নির্বিচারে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নিহত আবু সাঈদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটকে ‘শহীদ আবু সাঈদ তোরণ’ নামে নামকরণ করতে হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিজন কুমার চাকী কালবেলাকে বলেন, আবু সাঈদের মৃত্যুতে আমরা দুঃখিত, ব্যথিত ও লজ্জিত। আমরা বিচার চাই, সুষ্ঠ তদন্ত করে অভিযুক্তকে আইনের আনার দাবি জানাই।
তিনি বলেন, কোনো শিক্ষককেই যেন কোনো শিক্ষার্থীর লাশ বহন করতে না হয় সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। আমরা এ ব্যাপারে কঠোর কর্মসূচি দিব।
বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, সারা দেশের শিক্ষকরা যখন মাথা নিচু করে চলতে শুরু করেছে তখন শিক্ষার্থীরা আমাদের পথ দেখিয়েছে।
তিনি বলেন, পুলিশ যেভাবে গুলি করেছে তা সরকারের নির্দেশ ছিল কি না যে যাকে পাও তাকে গুলি করো। যদি তাই না হয় তাহলে কেন একজন ছাত্রের বুকে গুলি করা হল। এটা গুলি করে মেরা ফেলা, এটা ঘটনাক্রমে মৃত্যু নয়। এটা গুলি করে হত্যা করা। আমরা এর বিচার চাই। আমরা সারা দেশের শিক্ষকদের অনুরোধ করব, আপনারা মাথা নিচু না করে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ান। আপনাদের মেরুদণ্ড না থাকলে জাতির মেরুদণ্ড থাকবে না। এ মেরুদণ্ডহীন জাতি আমরা দেখতে চাই না।
বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ মন্ডল বলেন, যেই এ গুলি করে আমাদের ছাত্রকে হত্যা করেছে তাদের শাস্তি চাই।
এদিকে, আবু সাঈদের মৃত্যুতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুরে নগরীর গ্রান্ড হোটেল মোড়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি ও বিভিন্ন দল গায়েবানা নামাজ পড়েন।
সূত্র-কালবেলা।