গত বছর ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে ৮৪ রানের একেটি ইনিংস খেলেছিলেন মুমিনুল হক। তবে সর্বশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন, ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এর মধ্যে ১৩টি টেস্ট খেলেছেন মুমিনুল। নেতৃত্বে থাকা অবস্থায় শেষ দিকে তো নিজের ফর্মই হারিয়ে ফেলেছিলেন।
অবশেষে আফগানিস্তানকে পেয়ে ১৩ টেস্ট পর ১৪তম টেস্টে এসে তিন অংকের দেখা পেলেন টেস্টে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার। নাজমুল হোসেন শান্তর জোড়া সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরির দেখা পেলেন মুমিনুল হকও।
১২৩ বল খেলে সেঞ্চুরির মাইলফলকে পৌঁছান তিনি। সেঞ্চুরির পথে ১২টি বাউন্ডারির মার মারেন মুমিনুল। তার সঙ্গে হাফ সেঞ্চুরির মাইলফলকে পৌঁছে যান অধিনায়ক লিটন কুমার দাসও। ৫৩ বলে ৮টি বাউন্ডারি মেরে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক।
এ রিপোর্ট লেখার সময় বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়িয়েছে ৪ উইকেট হারিয়ে ৪০৫ রানে। ১০৯ রান নিয়ে ব্যাট করছেন মুমিনুল হক। অধিনায়ক লিটন রয়েছেন ৫৮ রানে। বাংলাদেশের লিড ৬৪১ রানের।
এর আগে নাজমুল হোসেন শান্ত সেঞ্চুরির পর নিজের ইনিংসকে খুব বেশি বড় করতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে করা ১৪৬ রান ছোঁয়ার আগেই ফিরে যান সাজঘরে। তার ব্যাট থেকে আসে ১২৪ রানের ইনিংস। জহির খানের বলে আবদুল মালিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান চলতি টেস্টের সবচেয়ে সফলতম ব্যাটার।
২৭৪ রানে নাজমুল আউট হওয়ার পর অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমও মাঠে নেমে থিতু হতে পারেননি। মাত্র ৮ রান করে সেই জহির খানের বলে ইবরাহিম জাদরানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। ২৮২ রানের মাথায় পড়ে বাংলাদেশের চতুর্থ উইকেট।
দ্রুত ২ উইকেট পড়ে গেলেও আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটার মুমিনুল হক ঠিকই ব্যাট চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্যারিয়ারের ১৬তম হাফ সেঞ্চুরি করার পর এগিয়ে যাচ্ছেন ১২তম সেঞ্চুরির দিকে। তার সঙ্গে রয়েছেন অধিনায়ক লিটন দাস।
ব্যাটারদের দৃঢ়তায় আফগানিস্তানের সামনে বাংলাদেশের লিড ছাড়িয়ে গেছে ৬০০ রান। হাতে যেহেতু সময় আছে, সে কারণে বাংলাদেশ লিডটাকে আফগানদের একেবারে ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যেতে চায়। সে কারণে রানও তুলছে প্রায় ওয়ানডে স্টাইলে।
প্রথম ইনিংসের ২৩৬ রানের লিডের কারণে দ্বিতীয় ইনিংসেও বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাট করে যাচ্ছে বাংলাদেশ দলের ব্যাটাররা। তৃতীয় দিনের লাঞ্চ বিরতি পর্যন্ত আফগানদের সামনে এরই মধ্যে ৪৯১ রানের বিশাল লিড দাঁড় করিয়ে দিয়েছে টাইগাররা।
এরই মধ্যে একই টেস্টে উভয় ইনিংসে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি পেয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। হাফ সেঞ্চুরি করেছেন জাকির হাসান। হাফ সেঞ্চুরির কাছাকাছি রয়েছেন মুমিনুল হকও।
শান্ত প্রথম ইনিংসেও খেলেছিলেন দুর্দান্ত একটি ইনিংস। ১৪৬ রানের অসাধারণ সেঞ্চুরিটি করার পর নিজের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন দ্বিতীয় ইনিংসেও।
৪০তম ওভারের প্রথম বলে হাশমত উল্লাহ শহিদিকে স্কয়ার লেগে ঠেলে দিয়েই ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি উদযাপন করেন বাংলাদেশের এই টপ অর্ডার। প্রথম ইনিংসের মতোই দৌড়ে মাঠের একপাশে এসে মাথার হেলমেট খুলে ব্যাট এগিয়ে তিনি চুমু ছুঁড়ে দিলেন গ্যালারির উদ্দেশ্যে।
১১৫ বলে সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। দু’দিন আগে প্রথম ইনিংসে ১১৮ বলে করেছিলেন সেঞ্চুরি। সেবার ১৪৬ রানে আউট হয়ে গেলেও এবার শান্ত কত রানে থামেন, সেটাই দেখার।
এর আগে কি অসাধারণ এক জুটি গড়ে তুলেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত এবং জাকির হাসান। অথচ, সেই জুটিরই কিনা যবনিকাপাত ঘটলো একটি ঝুঁকি নিতে গিয়ে রানআউট হওয়ার মধ্য দিয়ে। ১৭৩ রানের বিশাল এক জুটি গড়ার পর রানআউটে কাটা পড়ে বিদায় নিলেন জাকির হাসান। ৭১ রানের এক অনবদ্য ইনিংস খেলেছেন তিনি।
হাশমত উল্লাহ শহিদির করা ৩৫তম ওভারের ৩য় বলে নাজমুল হোসেন শান্ত বাউন্ডারি হাঁকানোর চেষ্টা করেন। নাসির জামাল বলটি দারুণ ক্ষিপ্রতায় বাউন্ডারি বাঁচান। বল কুড়িয়ে ফেরত পাঠান ইবরাহিম জাদরান। এরই মধ্যে তৃতীয় রান নিতে যান শান্ত। কিন্তু জাকির ক্রিজে পৌঁছার আগেই স্ট্যাম্প ভেঙে দেন আফসার জাজাই। ৯৫ বল খেলে ৭১ রান করে আউট হন জাকির।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঢাকা টেস্ট এখন পুরোপুরি বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রনে। প্রথম ইনিংসে ৩৮২ রানে অলআউট হয়ে গেলেও আফগানদের দেড়শও করতে দেয়নি বাংলাদেশের বোলাররা। ১৪৬ রানে অলআউট করে দিয়ে প্রথম ইনিংসেই লিড নিয়েছে ২৩৬ রানের।
দ্বিতীয় দিনই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ের উইকেট হারালেও আরেক ওপেনার জাকির হাসান এবং টপ অর্ডার নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে বাংলাদেশের লিডকে আফগানদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছেন।
দ্বিতীয় দিন শেষ বিকেলেই বাংলাদেশের লিড দাঁড়িয়ে যায় ছিল ৩৭০ রান। ১ উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রান নিয়ে দিন শেষ করে টাইগাররা। তৃতীয় দিন সকালে ব্যাট করতে নেমে আগের দিনের দৃঢ়তাই দেখাচ্ছেন শান্ত এবং জাকির। দু’জনের ব্যাটে চড়েই লিড পার হয়ে গেছে ৪০০ রান।
এর আগে টেস্টের প্রথম দিন টস হেরে ব্যাট করতে নেমেছিলো বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্তর অনবদ্য ১৪৬ রান এবং মাহমুদুল হাসান জয়ের ৭৬ রানের ওপর ভর করে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ৩৮২ রান। আফগানিস্তানের নিজাত মাসুদ নেন ৫ উইকেট।
জবাব দিতে নেমে আফগানদের কোনো ব্যাটার ৪০ এর ঘরও স্পর্শ করতে পারেনি। ১৪৬ রানে অলআউট হয়ে যায় তারা। ৪ উইকেট নেন এবাদত হোসেন। ২টি করে উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম, তাইজুল ইসলাম এবং মেহেদী হাসান মিরাজ।