সাময়িক বরখাস্ত এডিসি হারুন
তৃণমূলে অসন্তোষ, ফেসবুকে কটাক্ষ

ADC harun 3
print news

ছাত্রলীগের তিন নেতাকে থানায় বেধড়ক মারধরের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩টি হল শাখা ছাত্রলীগ বিচার চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ কোনো বিবৃতি দেয়নি।

একই ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ছাত্রদল ও ছাত্র ইউনিয়ন। তবে চুপ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তারা সোমবার দুপুর পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি।

অবশ্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঘটনার বিচার দাবি করেন।

আজও ছাত্রলীগের নেতারা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কার্যালয়ে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের দেখা করে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

সর্বশেষ ছাত্রলীগের তিন কেন্দ্রীয় নেতাকে থানায় মারধর করার ঘটনায় পুলিশের রমনা বিভাগ থেকে বদলি হওয়া অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপতির আদেশে আজ সোমবার বিকেলে এডিসি হারুনকে সাময়িক বরখাস্তের প্রজ্ঞাপনে সই করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, হারুন অর রশিদকে জনস্বার্থে সরকারি কর্ম থেকে বিরত রাখা আবশ্যক ও সমীচীন। তাঁকে সরকারি চাকরি আইনের বিধান অনুযায়ী ১১ সেপ্টেম্বর (২০২৩) থেকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, সাময়িক বরখাস্তকালীন এডিসি হারুন পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্ত থাকবেন এবং বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো।

এর আগে রোববার দুপুরে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এডিসি হারুনকে রমনা বিভাগ থেকে সরিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দাঙ্গা দমন বা পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। একই দিন সন্ধ্যায় জানানো হয়, তাঁকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়।

এদিকে অবশ্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভূমিকায় সন্তুষ্ট হতে পারছেন না নেতা-কর্মীদের একটি অংশ। মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী ওই অংশটি তিন নেতাকে পেটানোর ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিতে কেন্দ্রের দুই শীর্ষ নেতার আন্তরিকতার ঘাটতি দেখতে পাচ্ছেন।

ছাত্রলীগ নেতাদের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে কটাক্ষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করছেন। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ছাত্রলীগ বিষয়টি নিয়ে আগাচ্ছে। এটা পরিণত আচরণ।

ব্যক্তিগত বিষয়কে কেন্দ্র করে গত শনিবার রাতে ছাত্রলীগের দুজন কেন্দ্রীয় নেতাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে বেদম পেটান ডিএমপি রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ।

ভুক্তভোগী নেতাদের অভিযোগ, রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হকের সঙ্গে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ঘটনার জেরে এডিসি হারুন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। ছাত্রলীগ নেতাদের ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন আজিজুল।

এ ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে গতকাল দুপুরে এডিসি হারুনকে রমনা জোন থেকে প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়। পরে বিকেলে তাঁকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়।

অবশ্য এডিসি হারুনের বদলিতে সন্তুষ্ট নন ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতা-কর্মীদের বড় অংশ। তাঁদের দাবি, এডিসি হারুন ছাত্রলীগের তিন নেতাকে যেভাবে পিটিয়েছেন, সেটা ফৌজদারি অপরাধ। তাঁকে বরখাস্ত করতে হবে এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হতে হবে।

ভুক্তভোগীদের কেউ আজ বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত মামলা করেননি।

পুলিশের মারধরের শিকার ছাত্রলীগের তিন নেতা হলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান।

গুরুতর আহত আনোয়ার হোসেন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। অন্যরা চিকিৎসা নিয়ে শনিবারই হলে ফিরে গেছেন।

ফেসবুকে কটাক্ষ

যেহেতু দুজন দুটি হলের শীর্ষ নেতা, সেহেতু মারধরের ঘটনাটি নিয়ে সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কিছু অনুসারী ফেসবুকে কেন্দ্রীয় দুই শীর্ষ নেতার সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। তাঁদের পোস্টগুলোর বক্তব্য প্রায় একই ধরনের। অবশ্য দুই নেতাকে মারধরের ঘটনায় তাঁরা ঠিক কী ধরনের ব্যবস্থা দেখতে চান, সে বিষয়টি কারও বক্তব্যেই স্পষ্ট নয়।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে গতকাল ফেসবুকে প্রথম পোস্টটি দেন মাস্টারদা সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুন্সি রাকিব হাসান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

রাকিব ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে লিখেছেন, ‘হারুন-টারুন কিছুই না। যেদিন থেকে ফুল, পাখি, গান, জারুল হওয়া শুরু করেছে, সেদিন থেকে ছাত্রলীগ লাল সুতায় ঝুলে গেছে। আর এর সঙ্গে নতুন সুর যোগ হইছে আবার আহ্হা, উহ্হু।’

রাকিব আরও লিখেছেন, ‘আমরা সেই ছাত্রলীগ ফিরে পেতে চাই, যে ছাত্রলীগের একজন কর্মীর জয় বাংলা স্লোগানে প্রকম্পিত হতো রাজপথ। আমরা এই ফুল, ফল, জারুল অভিশাপ থেকে মুক্তি চাই।’

একই ধরনের পোস্ট দিতে দেখা গেছে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফরিদ, সূর্যসেন হল শাখার সদস্য মিনহাজুল ইসলামসহ কয়েকজনকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর কোনো বিবৃতি দেননি। তবে তাঁরা পুলিশি নির্যাতনে আহত কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ারকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন।

নিয়মতান্ত্রিক পথের পক্ষে মত

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই শীর্ষ নেতার নিয়মতান্ত্রিক পদক্ষেপকে সঠিক মনে করছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ১ নম্বর সহসভাপতি মো. রাকিবুল হাসান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দায়িত্বশীল জায়গা থেকে ছাত্রলীগ লাগামহীন হতে পারে না, হবেও না৷ ছাত্রলীগ নিয়মতান্ত্রিক পথেই হাঁটবে।’ তিনি আরও লেখেন, বিক্ষিপ্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পথকে কোনোভাবেই অমসৃণ হতে দেবে না ছাত্রলীগ।

একই ধরনের পোস্ট দিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবদুর রহিম, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আকিব মোহাম্মদ ফুয়াদ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান। আমিরুজ্জামান লিখেছেন, ছাত্রলীগ পরিণত আচরণ করেছে।

কেন্দ্রের ভূমিকার পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা নিয়ে বক্তব্য জানতে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম ও সাধারণ সম্পাদক ওয়ালী আসিফের মুঠোফোনে একাধিক কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। গতকাল থেকে তাঁরা ফোন ধরছেন না।

টিএসসিতে মানববন্ধন

এদিকে ছাত্রলীগের দুই নেতার ওপর নির্যাতনকারী এডিসি হারুন বরখাস্ত ও গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ দুপুরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন হয়েছে।

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা’ ও ‘গাজীপুর জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি’ ব্যানারে আয়োজিত এই মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক কিছু নেতাও অংশ নেন।

সাবেক এই নেতাদের মধ্যে আছেন সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সোহান খান, শাকিল আহমেদ, সৈয়দ আরিফ হোসেন, হাসিব মীর প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মী—কাউকেই ছাড় দেননি এডিসি হারুন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনেও তিনি হামলা করেন। এডিসি হারুন মানসিক বিকারগ্রস্ত একজন পুলিশ কর্মকর্তা।

বক্তারা আরও বলেন, শিক্ষার্থী দেখলেই এডিসি হারুন হামলা করতে এগিয়ে আসেন। এমন একজনকে পুলিশের এত বড় পদে কীভাবে রাখা হয়েছে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *