এশিয়ায় তাপপ্রবাহ
২০৫০ সালের মধ্যে অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে ঘরের বাইরে কাজ করা

ভয়ংকর তাপপ্রবাহে দগ্ধ ভারতের উত্তরাঞ্চলে অবশেষে শুরু হয়েছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত। এতে সেখানকার বাসিন্দারা আপাতত হাফছেড়ে বাঁচলেও তাপমাত্রার পারদ এখনো ওপরেই থাকছে দেশটির অন্যান্য অঞ্চলে। ক্রমবর্ধমান এই দাবদাহ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, কীভাবে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটির লাখ লাখ মানুষ জলবায়ু সংকটের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

উত্তর প্রদেশে চলতি সপ্তাহে বৃষ্টি নামার আগে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যটির কিছু কিছু এলাকায় তাপমাত্রার পারদ উঠেছিল ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এতে তাপজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন শত শত মানুষ।

বৃষ্টি শুরুর পর গত রোববার রাজ্যের রাজধানী লখনৌতে তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। আশপাশের অন্য শহরগুলোতেও কমেছে গরমের উত্তাপ। কিন্তু প্রতিবেশী রাজ্য বিহারে এখনো চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ, যার কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ।

বিহারের এক জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজ্যটিতে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তাপজনিত কারণে অন্তত ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে হিটস্ট্রোকে ঠিক কতজন মারা গেছেন, সে সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের কাছে সুস্পষ্ট তথ্য না থাকায় মৃতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তাপমাত্রা কিছুটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু সংকটের কারণে ভবিষ্যতে তাপপ্রবাহ আরও ঘন ঘন এবং দীর্ঘতর হতে চলেছে।

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান সেটেলমেন্টের সিনিয়র গবেষক ড. চাঁদনি সিং বলেন, ভারতের তাপমাত্রা মোকাবিলার ইতিহাস রয়েছে… এতে লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হতে চলেছে। তার মতে, ভয়কর তাপমাত্রা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কতটা প্রস্তুত, তার ওপর নির্ভর করবে তাপজনিত মৃত্যুর সংখ্যা।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যদি কাজ না করে, আপনার কাছে পর্যাপ্ত জরুরি পরিষেবা না থাকে, এটি (আরও মৃত্যু) ঘটাবে। কিন্তু আমরা নিশ্চিতভাবে যা জানি তা হলো, আমরা মধ্য-শতাব্দীর মধ্যেই বেঁচে থাকার সীমার কাছাকাছি চলে যাচ্ছি।

ভুক্তভোগী অন্যরাও
এ অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহে শুধু ভারতই নয়, ভুগছে অন্য দেশগুলোও। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, আগামী দিনগুলোতে উত্তর-পূর্ব চীনের তাপমাত্রার পারদ চড়া থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিছু কিছু শহরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও ওপরে উঠতে পারে।

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে গত সপ্তাহে তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছিল। কিন্তু সপ্তাহান্তের বৃষ্টিপাত অঞ্চলটিতে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এসেছে।

গবেষকরা সতর্ক করেছেন, এ ধরনের চরম তাপমাত্রার প্রভাব বিধ্বংসী হতে পারে।

দীর্ঘায়িত উষ্ণতা
ভারত সাধারণত মে ও জুন মাসের গ্রীষ্মে তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি বেশ আগেভাগে এসেছে এবং আরও দীর্ঘায়িত হয়েছে।

গত এপ্রিলে ভারত যে তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হয়েছিল, তাতে রাজধানী নয়াদিল্লিতে তাপমাত্রা টানা সাত দিন ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ছিল। এই তাপপ্রবাহ কিছু রাজ্যে স্কুল-কলেজ বন্ধ, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের ওপর মারাত্মক চাপ তৈরি করে।

জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) বলছে, জলবায়ু সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলা দেশগুলোর মধ্যে ভারত অন্যতম।

গত এপ্রিলে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, তীব্র তাপপ্রবাহ ভারতের কৃষি, অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর ‘অভূতপূর্ব বোঝা’ তৈরি করেছে এবং দেশটির উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত করছে।

সমীক্ষায় বলা হয়, দীর্ঘমেয়াদী অনুমানগুলো বলছে, ভারতের তাপপ্রবাহগুলো ২০৫০ সালের মধ্যে ছায়ায় বিশ্রাম নেওয়া সুস্থ মানুষের বেঁচে থাকার সীমা অতিক্রম করতে পারে। এটি শ্রমের উৎপাদনশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ৩১ থেকে ৪৮ কোটি মানুষের জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করবে৷ ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ প্রচণ্ড তাপের কারণে দিনের আলোয় বাইরে কাজ করার ক্ষমতা ১৫ শতাংশ কমে যাবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.