চকরিয়া বৃষ্টি কমলেও পানি নামছে ধীরে : মাতামুহুরী নদী থেকে বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার

ck9m
print news

টানা ছয়দিনের ভারী বর্ষণ আর পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে পানিবন্দি ছিলো কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়া প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। মঙ্গলবার রাত থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় মাতামুহুরী নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।

ফলে চকরিয়া-পেকুয়ার একটি পৌরসভাসহ ২৫ ইউনিয়ন থেকে পানি নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে। তবে, যেভাবে পানি উঠেছে সেভাব পানি নিচের দিকে নামছে না। খুব ধীওে নামছে বন্যার পানি। এতে এখনও পানিবন্দি রয়েছে আরও ২ থেকে ৩লাখ মানুষ।

বুধবার সকালে চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে আনোয়ার হোসেন (৭০) নামের বৃদ্ধেও লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বন্যার কনো একসময় তিনি পানির ¯্রােতে ভেসে যান বলে ধারনা করেছেন স্থানীয় লোকজন।

মাতামুহুরী নদী থেকে পানি নেমে গেলে স্থানীয় লোকজন ওই বৃদ্ধেও লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত আনোয়ার হোসেন সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ সুরাজপুর এলাকার বাসিন্দা বলে জানান স্থানীয় চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম।

এদিকে গত মঙ্গলবারে চকরিয়া বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজার -১(চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম, জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো.মাহফুজুল ইসলাম, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান, চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ, সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিমসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গত রাত থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় মাতামুহুরী নদীর পানি কমে গেছে। এর ফলে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে ঢলের পানি নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে।

চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর,কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, সাহারবিল, চিরিঙ্গা, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর,পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, ফাঁসিয়াখালী, বদরখালী,ডুলাহাজারা, খুটাখালীর নি¤œাঞ্চলে এখনও ঢলের পানি রয়ে গেছে। পানি নামলেও তা খুব ধীর গতিতে নামছে। যার কারণে এখনও দুর্ভোগে রয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। তাদের খাবারের জন্য চরম কষ্টে পড়েছে। তাদের ঘরের পরিবেশ এখনও রান্নার উপযোগী হয়ে উঠেনি।

অপরদিকে, পেকুয়া উপজেলায় কয়েকটি বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে পেকুয়া সদর ইউনিয়ন, উজানটিয়া, মগনামা, রাজাখালী, টৈটং,শিলখালী, বারবাকিয়া ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চলে এখনও পানি রয়ে গেছে। যার কারণে শুকনো খাবার ছাড়া রান্না করা খাবার খেতে পারছেনা।

বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন জানান, যেভাবে জনপ্রতিনিধি ও নেতারা খাবার বিতরণের ছবি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে দিচ্ছে সেভাবে লোকজন খাবার পাচেছনা। এই বন্যা পরিস্থিতিতেও নেতারা রাজনীতি করছে।

বন্যা কবলিত কাকারা ইউনিয়নের এমএমচর এলাকার বাসিন্দা ও চকরিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এম জাহেদ চৌধুরী বলেন, গত চারদিন ধরে পরিবার নিয়ে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছি। কেউ রান্না করা খাবারতো দূরের কথা শুকনো খাবারও পাইনি। কেউ খবরও নেয় নিই। বাড়িতে যা ছিলো তা নিয়ে কাটাচ্ছি। বাড়ির সব জিনিস নষ্ট হয়ে গেছে বন্যার পানিতে।

জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম সজীব বলেন, আমি কোন জনপ্রতিনিধি না। তারপরও এলাকার সন্তান হিসেবে মানবিক দিক বিবেচনা করে আমার সাধ্যমতো শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার দিচ্ছি।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, গতকাল রাত থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় পৌরসভার প্রায় ওয়ার্ড থেকে পানি নেমে গেছে। যারা রান্নাবান্না করতে পারছেনা প্রতিটি ঘরে রান্না করা খিঁচুড়ি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে।

সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, মাতামুহুরী নদীর পানি কমে যাওয়ার কারণে এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে, অধিকাংশ বাড়ি থেকে পানি নামেনি। গত কয়েকদিন ধরে বন্যার পানির কারণে যান চলাচল বন্ধ ছিলো।

বুধবার থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। পরিষদের পক্ষ থেকে দুর্গতদের রান্না করা খাবার দিচ্ছি।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউ্এনও) পূর্বিতা চাকমা জানান, এখনও অনেক বাড়িতে বন্যার পানি রয়ে গেছে। বন্যার পানি যাতে দ্রুত নেমে যায় সেজন্য বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ কেটে দিয়েছি। স্ব-স্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করেছি।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেছেন, মাতামুহুরী নদী থেকে ঢলের পানি কমে গেছে। বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। এমপিসহ ডিসি স্যার ও পুলিশ সুপার স্যার মহোদয় বন্যা দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি বন্যা কবলিতদের মাঝে শুকনো খাবার ও খিঁচুড়ি বিতরণ করেছেন।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৮টি ইউনিয়নের জন্য ২০ টন শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়ন পরিদর্শন করছি। তাদের শুকনো ও রান্না করা খাবার বিতরণ করছি।

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ¦ জাফর আলম জানান, বন্যার দিন রাত থেকে বন্যা কবলিত মানুষের পাশে রয়েছি। আমার পক্ষ থেকে এবং উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে খিচুড়ি বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিদর্শন করছি।

তিনি আরও বলেন, চকরিয়া-পেকুয়ার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা.এনামুর রহমানকে অবহিত করেছি। তিনি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে তাৎক্ষণিকভাবে চকরিয়া-পেকুয়ার জন্য ৩৫টন চাল বরাদ্দ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *