২০২২ সালের ২৭ আগস্ট রাজধানীর দক্ষিণখানে চিরকুট লিখে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজানা মোসাদ্দিকা (২১)। বাবার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি চাইতে গেলে গালাগাল করেন বাবা শাহীন আলম। এর পরদিনই ১০তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন সানজানা। চিরকুটেই বাবার ওপর ক্ষোভের কথা লিখে যান তিনি।
মামলার চার্জশিটে এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দক্ষিণখান থানার উপ-পরিদর্শক রেজিয়া খাতুন। সম্প্রতি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন তিনি।
এ বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তা রেজিয়া খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘মামলাটি তদন্ত করে শাহীন আলমের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। পারিবারিক কলহ ও বাবার আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষার্থী সানজানা মোসাদ্দিকা আত্মহত্যা করেন বলে প্রাথমিক তদন্ত উঠে এসেছে। মামলাটি প্রমাণের জন্য ১৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।’
মামলার চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালে শাহীন দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তবে বিষয়টি তিনি গোপন রাখেন। যে কারণে কয়েক বছর ধরে তার সন্তানদের ঠিকমতো ভরণপোষণ দিতেন না। এমনকি তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে খারাপ আচরণ করতেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর বিষয়টি জানার পর মেয়ে সানজানা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি। তিনি শাহীনের আচরণে তার মর্যাদাহানির শঙ্কায় থাকতেন। ২০২২ সালের ৭ জুন সানজানার মা উম্মে কুলসুম শাহীনকে ডিভোর্স দেন। ডিভোর্সের পর শাহীন তার প্রথম স্ত্রীর বাসায় এসে গালাগাল করতেন। তার আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীদের কাছে তিনি কুৎসা রটনা করতেন।
পেনাল কোডের ৩০৬ ধারায় দাখিল করা চার্জশিটে আরও বলা হয়, ২০২২ সালের ২৬ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টায় শাহীন উম্মে কুলসুমের বাসায় আসেন। ডিভোর্স দেওয়ার পরও বাসায় আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলে শাহীন ক্ষিপ্ত হন এবং জোর করে বাসায় অবস্থান নেন। তাদের বাসার গৃহকর্মীর সঙ্গে শাহীন খারাপ আচরণ করেন, যা সানজানা জানতে পারেন। পরদিন ২৭ আগস্ট সানজানা শাহীনের কাছে ইউনিভার্সিটির ফি’র টাকা চাইলে তিনি গালাগাল করেন।
ওইদিন দুপুরে ১০তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েন সানজানা। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করে দক্ষিণখান থানা পুলিশ। এসময় একটি চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ। চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমার মৃত্যুর জন্য আমার বাবা দায়ী। একটা ঘরে পশুর সঙ্গে থাকা যায়, কিন্তু অমানুষের সঙ্গে না। একজন অত্যাচারী রেপিস্ট যে কাজের মেয়েকেও ছাড়ে নাই। আমি তার করুণ ভাগ্যের সূচনা।’
এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই সানজানার মা উম্মে সালমা বাদী হয়ে দক্ষিণখান থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেন। এতে সানজানার বাবা শাহীন আলমকে আসামি করা হয়। এ মামলায় তাকে গ্রেফতারের পর ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে ৩ সেপ্টেম্বর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। পরে উচ্চ আদালত থেকে তিনি জামিনে কারামুক্ত হন।
এদিকে, মেয়ে হত্যার বিচার চেয়েছেন সানজানার মা উম্মে কুলসুম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার মেয়েকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছেন তার বাবা। তার কারণেই সানজানা আত্মহত্যা করেছে। আমি তার বিচার চাই।’