আজ চাইলে আপনার প্রিয় মানুষটিকে চিঠি লিখতে পারেন। কারণ আজ বিশ্ব চিঠি দিবস। এক সময় মানুষের এক অন্যরকম আবেগ লুকিয়ে থাকত চিঠি লেখার ভেতর। ডাকপিয়নের অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে বসে থাকত কত শত বাঙালি। তবে কালের বিবর্তনের সাথে সাথে চিঠি লেখার মাধ্যমেরও পরিবর্তন হয়েছে।
বহু আগে ইংরেজ কথাকার সমারসেট মম যা বলেছিলেন, বর্তমানের বাস্তবতায় সেটাই সত্যি। চিঠি লেখা আসলেই এক হারিয়ে যাওয়া শিল্প।
বাঙালি কথাসাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘লাঠি তোমার দিন গিয়াছে।’ হ্যাঁ, লাঠির দিন তো বহুকাল আগেই গিয়েছে। সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অগ্রগতির সাথে আরও অনেক কিছুরই দিন হয়তো চলে গেছে। চিঠি এখন হয়ে উঠেছে ‘টেক্সট’। তাই বঙ্কিমচন্দ্রের কথা ধার করেই বলা যায়, চিঠি তোমারও দিন গিয়েছে!
শেরশাহের ঘোড়ার ডাক প্রচলনের আগে কীভাবে চিঠি আদান-প্রদান হত, তা নিয়ে দ্বিমত থাকলেও আজকাল দাপ্তরিক কাজের নথি বা আবেদনপত্রের ঝক্কি ছাড়া কেউ ডাকঘরে যে আর যায় না, সে সবারই জানা। অথচ একসময়ে দূরে থাকা আপনজনের সঙ্গে যোগাযোগের একটি মাধ্যমই ছিল চিঠি। শুধু দূরে নয়, অন্তরের খুব কাছের কাউকে মুখে না বলতে পারা কথাগুলোও সযত্নে সাজিয়ে নেওয়া হত চিঠিতে। এক একটি চিঠিতে কত যে গল্প, কত যে ইতিহাস থাকত! আর থাকত ভরপুর আবেগ।
চিঠির সাথেকার আবেগের দেখা এই আধুনিক যুগের হোয়্যাটসঅ্যাপে মিলবে না। প্রতিটি চিঠিকে জমিয়ে রাখার আনন্দ এক অন্যরকম গল্প বলে।
চিঠি শুধু প্রেম নয়, সব ধরনের যোগাযোগেরই মাধ্যম ছিল। কোনো এক বেকারের চাকরির খবর, বিদেশে থাকা ছেলের মায়ের কাছে চিঠি কিংবা দেশ হতে বিদেশে ছেলের জন্য মায়ের লেখা চিঠি। কোনো এক মৃত্যুর চিঠি আবার পরিবারে বয়ে আনত স্থবিরতা।
শুধু দূরে কিংবা অদেখা মানুষকেই চিঠি লিখত না মানুষ, যার সঙ্গে প্রায়ই দেখা হয় কিংবা প্রতিদিন দেখা করা প্রেমিক প্রেমিকাও একে অপরকে চিঠি লিখত। কারণ, চিঠিতে যত সুন্দর ভাষায় মনের অনুভূতি গুছিয়ে প্রকাশ করা যায়, মুখে ততটা বলা হয়ে ওঠে না। শুভেচ্ছা বার্তা, খোঁজখবর নেওয়া, টাকা পাঠানো, চাকরির যোগদানপত্র সবই এক সময় আসত চিঠির মাধ্যমে। আগের মতো আর বাড়িগুলোর গেটে দেখা মেলে না চিঠির বাক্সের। প্রেয়সীর কাছে সুগন্ধী মেখে চিঠি লিখত প্রেমিক, এমন কথা অনেকেই হয়ত শুনেছেন। এসব বানোয়াট কোনো গল্প নয়, একেবারেই সত্যি।