উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা বাস্তবায়নে আবারও আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা বাস্তবায়ন এবং অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ শেষ করার জন্য আবারও নৌকায় ভোট চাই। অন্য কোনো দলে এমন দেশপ্রেম নেই জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন উন্নয়ন করতে আওয়ামী লীগই পারবে অন্য কেউ না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় এবং মানুষের জন্য কাজ করে। আর অন্য একটি দল আছে এরা মানুষের সম্পদ লুটে খায়। এরা খুন, হত্যা, বোমাবাজি, গ্রেনেড হামলা, অর্থ পাচার, অস্ত্র চোরাচালান- এগুলোই জানে। মানুষের কল্যাণে তারা কাজ করতে জানে না। কিন্তু আমরা উন্নয়ন করি, আমরা সৃষ্টি করি, ওরা ভাঙে, ওরা নস্যাৎ করে। ওরা ধ্বংস করতে জানে, কাজেই ওদের থেকে সাবধান থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির কাজ মানুষ পুড়িয়ে মারা আর সম্পদ ধ্বংস করা। কোনো মানুষের মধ্যে যদি মনুষ্যত্ববোধ থাকে তাহলে জীবন্ত মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারতে পারে না। বিএনপি-জামায়াত বিভিন্ন জায়গায় মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করছে। গাড়ি-ঘোড়া পুড়িয়ে দিচ্ছে। মানুষকে পুড়িয়ে মারা, সম্পদ পুড়িয়ে নষ্ট করাই এখন তাদের কাজ।
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে শনিবার বিকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। দেশের প্রথম আইকনিক রেলস্টেশন ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ কার্যক্রম এবং গভীর সমুদ্রবন্দর টার্মিনালের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করতে পর্যটননগরী কক্সবাবাজারে এসে গতকাল তিনি নৌকার জন্য ভোট চেয়েছেন। এমনকি মাতারবাড়ী টাউনশিপ মাঠে অনুষ্ঠিত এই জনসভায় বক্তৃতার শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই স্লোগান দিয়েছেন। তিনি উচ্চৈঃস্বরে স্লোগান তোলেন, ‘নৌকা নৌকা নৌকা’। তখন উপস্থিত জনতা ও দলীয় নেতাকর্মীরাও বলেন, ‘নৌকা নৌকা’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্লোগান তুলে আবার বলেন, এবার জিতবে কে? উত্তরে জনতা ও দলীয় নেতাকর্মীরা বলেন ‘নৌকা নৌকা’। এবার জনসভার প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জিতবে এবার নৌকা, এরপর জয় বাংলা বলে সভা মঞ্চ থেকে বিদায় নেন।
জনসভার মাঠটি নির্মাণ কাজ শুরু হওয়া দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর ও প্রায় সমাপ্ত মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রসংলগ্ন। প্রায় তিন দশক পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী এলেন। গতকালের এ জনসভা মঞ্চে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ-সদস্য আশেক উল্লাহ রফিককে দলীয় প্রার্থী হিসাবে পরিচয় করিয়ে তাকে ভোট দেওয়ার জন্য এলাকাবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, ‘আশেককে দিয়ে গেলাম, রেখে গেলাম আপনাদের হাতে।’ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে শেখ হাসিনার আগমন কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা রং-বেরংয়ের পোশাক পরে ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে জনসভাস্থলে আসেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ১৫ বছরে দেশের যে উন্নয়ন করেছি তা নবীন প্রজন্মের অনেকেই বুঝবে না কারণ তারা দেখেনি, কোন দুরবস্থা থেকে বাংলাদেশ আজকের সম্মানজনক অবস্থানে এসেছে। আজকে বাংলাদেশ বদলে যাওয়া এক দেশ, কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে।
নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত করেছেন বলেই আমরা ক্ষমতায় আছি। আগামীতে নির্বাচন, সেই নির্বাচনেও আমি চাইব নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবারও আপনাদের সেবা ও যেসব কাজ অসমাপ্ত রয়েছে সেগুলো শেষ করার সুযোগ দেবেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতে চান, আপনারা কি নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন? হাত তুলে বলেন। উত্তরে উপস্থিত জনতা দুই হাত তুলে সমস্বরে সম্মতি জানান।
তার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আছেন জানিয়ে বলেন, বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। আমার হারাবার কিছু নেই। পাওয়ারও কিছু নেই। শুধু একটাই কাজ, বাংলাদেশের মানুষ যেন ভালো থাকে, বাংলাদেশের মানুষ যেন উন্নত থাকে, যেভাবে আমার বাবা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) স্বপ্ন দেখেছিলেনÑক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা, সেই বাংলাদেশই আমি গড়তে চাই। আমার বাবার স্বপ্নটাই আমি পূরণ করতে চাই।
মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় আরও বক্তৃতা করেন-দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, কেন্দ্রীয় নেতা সিরাজুল মোস্তফা চৌধুরী, সংসদ-সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ। জনসভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তারেক বিন ওসমান শরীফ।
এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর আলম চৌধুরী লিটন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কেন্দ্রীয় নেত্রী ওয়াশিকা আয়েশা খান প্রমুখ। কক্সবাজারের কর্মসূচি শেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ধ্যায় বিমানে ঢাকায় ফেরেন।