নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম এমপির পাশ থেকে লোক ততই দূরে সরে যাচ্ছে। একমাস আগেও তার নিজস্ব কার্যালয়ে শতশত নেতাকর্মী জড়ো হতেন। তারা এখন খবর রাখছেন না জাফর আলমের। ভোটের মাঠে স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা ছাড়া তেমন কাউকে পাশে পাচ্ছেন না তিনি।
এদিকে নৌকাহীন মাঠে হাতঘড়ি প্রতীক নিয়ে ভোটারের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী এবং স্থানীয় অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি ইবরাহিমের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। তারা বলছেন, গত পাঁচ বছর চকরিয়া-পেকুয়ার মানুষ ভয়ভীতির মধ্যে ছিলেন। নিরাপদে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হলে,দখলবাজ ও চাঁদাবাজ চক্র থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে হাতঘড়ি মার্কায় ভোট দেওয়ার বিকল্প নেই।
এই আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি মনোনয়ন পাওয়ার পর দলে ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু তার মনোনয়ন উচ্চ আদালতে আটকে যায়। শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে সালাহ উদ্দিন নামতে না পারায় পাল্টে যায় চিত্র। অভিযোগ আছে গত পাঁচ বছর জাফর আলমের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী। সরকার কৌশলগত কারণে এ আসনটি পরবর্তীতে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিকে ছেড়ে দেয়। বর্তমানে এই আসনে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন মেজর জেনারেল (অব.) ইব্রাহিম। ইতোমধ্যে তাকে জেলা আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দিয়েছে। গত ২৭ ডিসেম্বর সালাহ উদ্দিন আহমদ হাত ঘড়ি প্রতীককে বিজয়ী করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। বেশিরভাগ ইউনিয়ন, একটি পৌরসভাসহ ও সাংগঠনিক ইউনিট গুলো ঘড়ি প্রতীকের জন্য কাজ শুরু করে।
চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দিন সমকালকে বলেন,‘গত ৫ বছরে এমপি জাফর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বাদ দিয়ে নিজস্ব বলয় তৈরী করে চকরিয়া-পেকুয়ায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী করে সাধারণ মানুষকে জীম্মি করেছেন। এবার সাধারণ মানুষ এর জবাব দেবে।’
অভিযোগ আছে, জাফর আলম গত পাঁচ বছর ত্যাগী নেতাকর্মীর মূল্যায়ন না করে একতরফা দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। এছাড়া পেকুয়ায় একটি নির্বাচনী সভায় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সমালোচনা করায় দলীয় পদ হারান তিনি। এর পর কর্মীরা সরে পড়েন। ভোটের মাঠে গণসংযোগ করছেন জাফর আলমের স্ত্রী শাহেদ বেগম, কন্যা ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান তানিয়া আফরিন এবং পুত্র তানভির সিদ্দিকী তুহিন। কিছু নেতাকর্মী ছাড়া কাউকে তেমন দেখা যাচ্ছে না তার পাশে।
জাফর আলম অভিযোগ করেন, ‘গত কয়েক দিনে তার সমর্থক অনেক নেতাকে আটক করা হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে অনেকে গা ডাকা দিয়েছেন।’
অন্যদিকে মোহাম্মদ ইব্রাহিম অভিযোগ করেন, ‘এমপির ক্যাডাররা হাতঘড়ির কর্মীদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। পোস্টার এবং ব্যানার ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’
এই আসনে অপর চার প্রার্থী হলেন ওয়ার্কার্স পার্টির আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম (হাতুড়ি), ইসলামী ফ্রন্টের মুহাম্মদ বেলাল উদ্দিন (মোমবাতি), স্বতন্ত্র প্রার্থী কমর উদ্দিন আরমান (কলার ছড়ি) ও তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী (ঈগল)। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনে আওয়ামী লীগ দুবার, জাতীয় পার্টি তিনবার, বিএনপি পাঁচবার ও জামায়াতে ইসলামী একবার জয়লাভ করে।