প্রবাসী চাচার সাড়ে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে অপহরণের নাটক যুবকের

WhatsApp Image 2024 03 01 at 15.09.15 830b7b9a
print news

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ বছর দুবাইতে ব্যবসা করছেন এক প্রবাসী। নিজের ছেলে সন্তান নেই। সম্প্রতি দেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। খরচ কমাতে কয়েকজন আত্ময়-স্বজন এক সাথে মিলে ২ লাখ ৪৯ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন বাড়ির পাশ্ববর্তী এক ছেলের একাউন্টে। কথা ছিলো টাকাগুলো তুলে প্রবাসীর স্ত্রীর কাছে দেওয়ার। টাকাগুলো একাউন্টে জমা হওয়ার পর থেকে নানা তালবাহানা শুরু করেন। দীর্ঘ ১ মাস পর একটি তারিখ দিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগে অপরহণ নাটক সাজিয়ে টাকাগুলোসহ লাপাত্তা হয়ে যান সাইরাজ আফতাব সবুজ নামের এক যুবক। এরআগে পরিবারের নানা সমস্যার কথা বলে ওই প্রবাসীর কাছ থেকে নিয়েছিলেন আরও ২ লাখ ১৭ হাজার টাকা।

প্রতারক সবুজ কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া কোনারপাড়া এলাকার ইয়াবা কারবারি নাছির উদ্দিনের ছেলে।

এভাবেই প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন একই এলাকার মো: সাইফুল ইসলাম নামের এক দুবাই প্রবাসী। এতে প্রতিকার চেয়ে কক্সবাজার সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।

প্রবাসী সাইফুল জানান, ২০০২ সাল থেকে তিনি দুবাইতে ব্যবসা করছেন। তার কোন ছেলে না থাকায় কয়েক বছর ধরে প্রতিবেশী ও নিকট আত্মীয় সবুজের একাউন্টে টাকা পাঠান পরিবারের জন্য। খরচ কমাতে সাথে টাকা পাঠান তার প্রবাসী তিন ভাগিনাসহ দোকানের কয়েকজন কর্মচারী। দেশে আসলে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রবাসীর কাছ থেকে ঋন নিয়েছিলেন ২ লাখ ১৭ হাজার টাকা। সাইফুল সম্প্রতি দেশে ফিরার কথা জানিয়ে গত ৩ জানুয়ারি সবুজের ডাচ বাংলা কক্সবাজার শাখার ৭০১৭৩২০৮০৪৩৪৪ হিসাব নম্বরে টাকা পাঠান ২ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। প্রবাসী দেশে আসার খবর পেয়ে আগের টাকা ফেরত ও সম্প্রতি পাঠানো টাকা হাতিয়ে নিতে নানা কৌশল আঁকতে থাকেন। দাবি করেন, তার ব্যক্তিগত একাউন্টটি নানা জটিলতায় পড়েছে। এভাবেই ১ মাস পর তিনি ফোন করে জানান তাকে অপহরণ করা হয়েছে।

সাইফুল বলেন, সবুজকে নিজের ছেলের মতো বিশ্বাস করেছিলাম। যখন যা চেয়েছে তাই দিয়েছি। তার পরিবারের সমস্যার কথা বলে এরআগে আমার কাছ থেকে ২ লাখ ১৭ হাজার টাকা ঋন নিয়েছে সে। সর্বশেষ তার একাউন্টে ২ লাখ ৪৯ হাজার টাকা পাঠালে দীর্ঘদিন গড়িমসি করতে থাকেন। ১ মাস পর ফেব্রয়ারীর ৮ তারিখ হঠাৎ একটি অপরহণ নাটক করেন সবুজ। গল্প সাজান ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে দিনে দুপুরে ডাকাত দল তাকে অপরণ করে নিয়ে যান। টাকাগুলো নিয়ে তাকে গভীর রাতে টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের চাইল্যাতলী এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যাওয়া হয়। অথচ এই সড়কে র‍্যাবের কার্যালয় রয়েছে। কাল্পনিক কাহিনীটি শুনে তাকে পুলিশের ধারস্ত হতে পরামর্শ দিলে সে উল্টো আমাকে হুন্ডির টাকা উল্লেখ করে ভয় দেখান। অথচ আমি রেমিটেন্স দিয়ে টাকাগুলো ব্যাংকে পাঠিয়েছি। পরে ব্যাংকে খবর নিয়ে জানতে পারলাম টাকাগুলো পাঠানোর পর ৪ দিনের মধ্যে বিভিন্নভাবে তুলে ফেলেন। যেদিন টাকা উত্তলনের কথা দাবি করেছে; সেইদিন কোন টাকাই তুলেনি। ১ মাস নানা তালবাহানা করে নাটক সাজানোর পর থেকে লাপাত্তা হয়ে যায় সবুজ। বর্তমানে তার কাছে ৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা পাবো। প্রথমে টাকা ফেরত দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও টাকা চাওয়ায় এখন আমার পরিবারকে নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছেন।

ঘাম ঝরানো টাকা ফেরত পেতে নিরুপায় হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহীনির ধারস্ত হয়েছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, টাকা পাঠানোর পর থেকে আজ দেবো কাল দেবো বলে আশ্বাস দেন। সেদিন নাটক সাজান ওইদিন টাকা দিয়ে দেওয়ার কথা। অপহরণ নাটক সাজানোর কয়েকদিন পর থেকে আর কোনো খোঁজখবর নেই প্রতারক সবুজের। অথচ ওই আড়াই লাখ টাকার মধ্যে আমার আত্মীয়-স্বজনের টাকাও রয়েছে। এখন তাদের দেনা চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সবুজের বাবা নাছির উদ্দিন একজন ইয়াবা কারবারি। ২০১৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বিপুল ইয়াবাসহ চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় আটক হয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন।

কাউছার, নাছির, ইরফান নামের স্থানীয় কয়েকজন যুবক জানান, তাদের বৈধ কোন আয় নেই, কিন্ত চলাফেরা করেন রাজার হালতে। এখন বুঝতে পেরেছি প্রবাসীর সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছেন। অপহরণের ঘটনা শুনেই প্রথমে সন্দেহ করেছিলাম। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে তার অভিনয়ের বিষয়টি উঠে আসে। টাকা ফেরত দেওয়ার ভয়ে এখন লাপাত্তা হয়ে যান তিনি।

এবিষয়ে জানতে সবুজের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এবিষয়ে সদর থানার ওসি রকিবুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *