সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে গুলি করা সেই শিক্ষক রায়হান শরীফকে আটক করেছে পুলিশ। তাকে আটক করে মেডিক্যাল কলেজ থেকে সদর থানায় আনা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ আরাফাত আমিন তমালের কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ হান্নান মিয়া বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে মেডিক্যাল কলেজ থেকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিলেই সেটা এজাহার হিসেবে নিয়ে মামলা করা হবে।
মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু এত বড় ঘটনা ঘটেছে মামলা তো হবেই। মামলা হলে সেই অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ ছাড়াও অস্ত্রটি বৈধ নাকি অবৈধ তা যাচাই করা হচ্ছে।
কলেজটির অধ্যক্ষ মো. আমিরুল হোসেন বলেন, ওই শিক্ষার্থীর অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। সে এখন শঙ্কামুক্ত আছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। তবে অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিত্সক কামরুল হাসান বলেন, আরাফাতের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা চলছে।
গুলিবিদ্ধ আরাফাত আমিন তমাল ও তার সহপাঠীরা জানান, শিক্ষক রায়হান শরীফ ক্লাস রুটিনে ক্লাস না থাকা সত্ত্বেও সময়–অসময়ে শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে তার ক্লাস করতে বলতেন। রবিবার বিকালে হঠাৎ আরাফাতসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মোবাইলে কল করে ক্লাসে আসতে বলেন। কিন্তু আরাফাতসহ শিক্ষার্থীদের কেউই ক্লাসে আসেননি। সোমবার বিকাল ৩টার দিকে ফরেনসিকের ভাইবা ক্লাস চলার সময় তিনি গতকালের প্রসঙ্গ তুলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা করতে করতে একপর্যায়ে পকেট থেকে পিস্তল বের করে গুলি করেন। গুলিটি আরাফাতের ডান পায়ের ঊরুতে লাগে। তার চিৎকারে সবাই এগিয়ে এসে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করেন। পরে শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষককে তালাবদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাকে ওই পিস্তলসহ নিয়ে যায়।
ওই মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুস সাকিব উচ্ছ্বাস দাবি করেন, ওই শিক্ষক অসময়ে ক্লাস নিতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তা করতে রাজি ছিল না। আজ তিনি সবাইকে জোর করে ক্লাসে বসান। এরপর তার পিস্তলটি বের করে এক ছাত্রীর কানের পাশে নিয়ে তমালের দিকে গুলি করেন। এরপর গুলিটি তমালের পায়ে লাগে। মূলত তিনি অস্ত্রের প্রদর্শন করার জন্যই গুলিটি করেন।
ছাত্রলীগের এই নেতা আরও দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে এর আগেও গুলি করার অভিযোগ আছে। তিনি শিক্ষার্থীদের হলে গিয়েও অস্ত্র প্রদর্শন করেন। শিক্ষার্থীদের নেশা করার প্রলোভনসহ অনেক কথা বলেন। ছাত্রীদের নিয়ে রাতে কলেজে ঘুরে বেড়াতে বাধ্য করেন। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে এর আগে জানানো হলেও তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
প্রসঙ্গত, সোমবার (৪ মার্চ) সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজে আরাফাত আমিন তমাল নামে এক শিক্ষার্থীকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে কলেজের শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে। বিকেল ৩টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।
অভিযুক্ত ডা. রায়হান শরীফ কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক। আহত তমাল কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি ওই মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। বগুড়া পৌর শহরের নাটাই পাড়া ধানসিঁড়ি মহল্লার আবদুল্লা আলামিনের ছেলে।