ক্ষমতা নেওয়ার প্রথম ১০০ দিনে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত ৫ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে পুলিশের অনুপস্থিতি এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ড জনমনে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে। ভুক্তভোগী এবং সাধারণ মানুষ সবাই বলছেন অপরাধ দমনে সরকারকে ‘আরো কঠোর’ হতে হবে।
বিবিসির সঙ্গে আলাপে এরকম দাবি জানালেন সিদ্ধিরগঞ্জের ইজিবাইক চালক মোহাম্মদ শামীম। ঋণ করে কেনা শামীমের ইজিবাইকটি গত সপ্তাহে ছিনতাই করেছে দুর্বৃত্তরা। কৌশলে অজ্ঞান করে লুটে নেওয়া হয় তার আয় রোজগারের একমাত্র অবলম্বন। বর্তমান পরিস্থিতিকে নাজুক উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত তিনমাসে ডজনের বেশি ইজিবাইক ছিনতাই হয়েছে, এর মধ্যে চারজন চালককে খুন করা হয়েছে।
রাতে গাড়ি নিয়ে বাইর হইতে অনেক মানুষের কষ্ট হচ্ছে। মানে ভয় পাইতেছে। কারণ কখন কোন দিক দিয়া আসে, ছুরি আঘাত করে, আহত করে বা নিহত করে।” সারাদেশে ইজিবাইক চালকদের মধ্যে একটা ছিনতাই আতঙ্ক কাজ করছে বলেও উল্লেখ করেন মি. শামিম।
কারণ চলতি নভেম্বর মাসের দুই সপ্তাহে রূপগঞ্জ, নরসিংদি, কিশোরগঞ্জ, ঝিনাইদহ জেলায় চালককে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাই করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বিভিন্ন জায়গায় মব সৃষ্টি করে গণপিটুনি দিয়ে বিচার বহির্ভূত হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। গত ১০ নভেম্বর রোববার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সানাড়পাড় বাস স্ট্যান্ডে এক পুলিশ সদস্যকে ‘ভুয়া পুলিশ’ আখ্যা দিয়ে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পুলিশ জানায়, আক্রান্ত ব্যক্তি ভুয়া পুলিশ নন বাংলাদেশ পুলিশের একজন সদস্য। পকেটমার ভুয়া পুলিশ গুজব রটিয়ে তাকে গনপিটুনি দেওয়ার ব্যবস্থা করে।
আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আল মামুন বিবিসিকে জানান ৫ আগস্টের পর এক মাসের মতো পুলিশের অনুপস্থিতি অপরাধ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। এখন সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে টহল এবং পুলিশিং চলছে। “নিয়মিত পুলিশিংটা আমি আসার আগ পর্যন্ত বন্ধই ছিল। সেপ্টেম্বরের সাত তারিখে আমি জয়েন করার পর আস্তে আস্তে পুলিশিংটা দৃশ্যমান হয়েছে। এখন আমরা ফুল ফিল্ডওয়ার্কে আছি। আগে চারটা টহল বের হতো এখন যানবাহন সংকটে দুইটা টহল বের হয়। একটা ভাড়া নেই আরেকটা সরকারি গাড়ি আছে। থানার গাড়িতো পুড়ায় দিছে অনেকগুলো,” বলেন আল মামুন।
রাজধানী ঢাকার মধ্যে মোহাম্মদপুর এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে। সেখানে বিহারী ক্যাম্পে খুনোখুনি, প্রকাশ্যে ছিনতাই, ডাকাতি, সশস্ত্র মহড়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি উন্নতির জন্য মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযান হয়েছে। জেনেভা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক সন্দেহভাজনক আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে।
কিন্তু এখনো মানুষের আতঙ্ক কাটেনি বলেই জানান এলাকার একজন বাসিন্দা জেসমিন। তার ভাষায়, “এখন একটু পরিস্থিতি ভয়াবহ। কেমন যেন একটা আতঙ্কে আছি আমরা। আগে রাতে বারোটা একটায় মানুষ যাইতে পারছে বাইরে। এখন তো মানুষ ভয়ের চোটে বাইরায় না।”
স্কুলে সন্তানকে নিয়মিত আনা নেওয়া করা একজন অভিভাবক বলেন, “আমি ২০১০ সালের পর থেকে ঢাকাতে আছি। আমারা কখনো আমাদের এলাকার মধ্যে এমন নিউজ পাইনি। গণ্ডগোলের পর থেকে যখন এরকম দেখতেছি তখন আতঙ্কতো থাকবেই।”
“চলন্ত রিকশা থেকে বয়স্ক একজনের কানের দুলটা ছিড়ে নিয়ে গেছে। রক্ত ঝরছে। এটা দেখার পর থেকে আমার বাচ্চাকে আমি বাসা থেকে হিজাব পরায় নিয়ে আসি, স্কুলের কাছে এসে হিজাবটা খুলি।