বাজারভিত্তিক সুদহার ও মুদ্রানীতির কাঠামো বদলের ঘোষণা বাজেটে

kamal
print news

আইএমএফ এর ঋণের শর্ত পূরণে ব্যাংক খাতে সুদের সর্বোচ্চ হার এবং মুদ্রানীতির কাঠামো নিয়ে বাজেটে নতুন ঘোষণা এল।

‘স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে’ যাত্রার প্রত্যাশা রেখে ভোটের আগে রেকর্ড ঘাটতির যে বাজেট অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাব করেছেন, তাতে বাজারভিত্তিক সুদহার চালু এবং মুদ্রানীতির কাঠামোতে ‘মনিটারি টার্গেটিং’ এর জায়গায় ‘ইন্টারেস্ট রেট টার্গেটিং’ এর দিকে সরে আসার কথা বলছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।

এর মধ্যে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা তিনি রাজস্ব খাত থেকে যোগান দেওয়ার পরিকল্পনা সাজিয়েছেন, যা বাস্তবায়ন করা হবে বড় চ্যালেঞ্জ।

তারপরও তার আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকার বেশি, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় ঘাটতির এই পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৫.২ শতাংশ।

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘পরিবর্তিত বৈশ্বিক ও দেশীয় বাস্তবতার’ সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনার চিন্তা ভাবনা করছে।

“মুদ্রানীতিতে কাঠামোতে অধিকতর স্বচ্ছতা ও নমনীয়তা আনা এবং মুদ্রার চাহিদা ও সরবরাহকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে কার্যকারিতা বিবেচনায় মুদ্রানীতিতে ‘মনিটরি টার্গেটিং’ এর স্থলে ‘ইন্টারেস্ট রেট টার্গেটিং’ এর দিকে সরে আসার চিন্তা করা হচ্ছে।”

এছাড়া সুদের ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারকে বাজারভিত্তিক করার কাজ চলছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

মুদ্রানীতি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মুদ্রানীতির বর্তমান কাঠামোতে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু অর্থনীতির আকার বড় হওয়ায় এটা ‘সেভাবে আর কাজ করছে না’।

“এখন বাজারে মুদ্রা সরবরাহের চেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে বাজারভিত্তিক সুদহার নীতিকে। বাজারভিত্তিক হওয়ায় সুদহার প্রয়োজনে উঠা-নামা করবে।’’

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপের মুখে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে গত বছর আইএমএফ এর ঋণের আবেদন করেছিল বাংলাদেশ। তখনই সুদহার ও বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ আসে।

৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার হাতে পায় বাংলাদেশ। তখনও ঋণের ওই শর্ত পূরণের আহ্বান অব্যাহত থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামী জুলাই মাসে বছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য ঘোষণা হতে যাওয়া মুদ্রানীতিতে সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের রূপরেখা থাকতে পারে।

২০২০ সালের এপ্রিলে ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে বেঁধে দেওয়ার পর থেকেই তা তুলে দেওয়ার দাবি আসছিল অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন মহল থেকে।

মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশ পেরিয়ে যাওয়ায় এ দাবি তীব্র হওয়ায় ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার তুলে দেওয়ার কথা সরাসরি না বললেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঘোষণা করা হয়, আগামী জুলাই থেকে সুদহার করিডোর করতে ‘রেফারেন্স রেট’ ঠিক করা হবে।

গত ছয় মাসের ট্রেজারি বিলের গড় সুদহারকে বিবেচনায় নিয়ে এই ‘রেফারেন্স রেট’ ঠিক করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

‘রেফারেন্স রেট’ এর সঙ্গে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ কত বেশি সুদ যোগ করতে পারবে, ঋণ বিতরণের সময় তাও বলে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “রেফারেন্স রেট এর মাধ্যমে ঋণ সুদহার ১০ শতাংশের মধ্যে বেঁধে না দিয়ে বাজারমুখী করতে হবে। বাজার যে সুদহার তৈরি করে, তা হতে দিতে হবে। এজন্য বাজারকে বিশ্বাস করতে হবে। এখানে ম্যানিপুলেট করলে তা কার্যকর হবে না।”

আর সুদহার যদি বাজারমুখী না হয়, তাহলে চাপে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারও সঠিকভাবে কাজ করবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার সন্দেহ হয়, যদি একটা জায়গায় সুদহার ও বিনিময় হার বেঁধে দেয়- তাহলে প্রকৃত অর্থে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।”

সরকারের বাজেট বাস্তবায়নে সহযোগিতা এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বাজারে কী পরিমাণ মুদ্রা সরবরাহ করা হবে- তার একটি আগাম ধারণা দেওয়া হয় মুদ্রানীতিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *