‘চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাত বিশ্বের জন্য অসহনীয় বিপর্যয় ডেকে আনবে’

china
print news

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লি শাংফু বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার যেকোনো সংঘাত ‘বিশ্বের জন্য অসহনীয় বিপর্যয়’ ডেকে আনবে। আর তাই সংঘাত রোধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপ চায় বেইজিং।

রোববার (৪ জুন) এশিয়ার শীর্ষ নিরাপত্তা সম্মেলনে শাংরি-লা ডায়ালগে পিপলস লিবারেশন আর্মির জেনারেলের ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় যোগ দেন চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফু। সেখানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় লি বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের একসঙ্গে বেড়ে ওঠার জন্য এ বিশ্ব যথেষ্ট বড়।

চলতি বছরের মার্চ মাসে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হওয়ার পর নিজের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ভাষণে তিনি বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের আলাদা রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া অন্য অনেক দিক থেকেও দু’টি পুরোই আলাদা।

‘তবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক-সহযোগিতা বাড়াতে উভয় পক্ষকে অভিন্ন ভিত্তি ও স্বার্থ খোঁজা থেকে বিরত রাখা উচিত নয়। এটি অনস্বীকার্য, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গুরুতর সংঘাত বা সংঘর্ষ বিশ্বের জন্য অসহনীয় বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।’

গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন সাগরে আঞ্চলিক বিরোধ ও সেমিকন্ডাক্টর চিপ রপ্তানির ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিধিনিষেধসহ বিভিন্ন বিষয়ে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে সম্পর্ক গুরুতরভাবে উত্তপ্ত অবস্থায় রয়েছে।

আর সর্বশেষ সংবেদনশীল তাইওয়ান প্রণালীর মধ্য দিয়ে চলাচল করায় যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সমালোচনা করেছে চীন। এমনকি, চীনের সামরিক বাহিনী ওই দুই দেশের বিরুদ্ধে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে ঝুঁকি সৃষ্টির’ অভিযোগ তুলেছে।

এদিকে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন শনিবার (৩ জুন) সিঙ্গাপুরে নিরাপত্তা সভায় দেওয়া এক বক্তৃতায় সামরিক আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানানোয় চীনের সমালোচনা করেছেন। তার দাবি, আলোচনায় অস্বীকৃতি পরাশক্তিগুলোকে অচলাবস্থায় ফেলে দিয়েছে।

লি শাংফু অবশ্য তার বক্তৃতায় সংযত ছিলেন। যদিও তিনি অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে তীব্র করার ও অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্রের কিছুটা সমালোচনাও করেন।

এছাড়া তিনি এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ন্যাটো সদৃশ সামরিক জোট প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ কেবল এ অঞ্চলটিকে আরও বিরোধপূর্ণ ও সংঘাতময় করে তুলবে।

লি শাংফুর দাবি, স্নায়ু যুদ্ধের মানসিকতা এখন পুনরুত্থিত হচ্ছে ও এটি নিরাপত্তা ঝুঁকিকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করছে। হুমকি ও আধিপত্যের পরিবর্তে পারস্পরিক শ্রদ্ধাকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কেনার দায়ে ২০১৮ সালে লি শাংফুর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এরপরও গত শুক্রবার নৈশভোজ অনুষ্ঠানে অস্টিনের সঙ্গে হাত মেলান লি। অবশ্য সেসময় তাদের মধ্যে গভীর কোনো আলোচনা হয়নি।

সম্মেলনের সাইডলাইনে একান্তে কথা বলার সময় চীনা সামরিক কর্মকর্তারা বলেন, সামরিক আলোচনা পুনরায় শুরু হওয়ার আগে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে এশিয়ার প্রতি কম সংঘাতমূলক মনোভাবের স্পষ্ট ইঙ্গিত চায় বেইজিং।

সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *