দ্রুত কারা চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে গরিবদের বাঁচান: হাইকোর্ট

haicurt
print news

দেশের কারাগারগুলোর শূন্যপদে এখনও চিকিৎসক নিয়োগ না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, ‘কারাগারে তো গরিব মানুষ থাকে। ধনীরা কারাগারে গেলেও তাদের জন্য ডিভিশনের ব্যবস্থা থাকে। তাই কারাগারে দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে গরিব মানুষকে বাঁচান।’

এক আবেদনের শুনানিকালে মঙ্গলবার (৬ জুন) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলীর চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. জে আর খান রবিন। অন্যদিকে কারা অধিদফতরের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।

শুনানির শুরুতে রিটকারী আইনজীবী জে আর খান রবিন কারাগারে শূন্যপদে এখনও চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি বলে আদালতকে জানান।

জবাবে আদালত বলেন, ‘বাংলাদেশে তো ডাক্তারের অভাব নেই। রাস্তায়ও ডাক্তার ঘুরতে দেখা যায়। বেসরকারি মেডিক্যাল থেকেও অনেকে ডাক্তারি পড়ছেন।’

এক পর্যায়ে কারা অধিদফতরের আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘কারা চিকিৎসকের ১৪১ পদের মধ্যে ১২৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকি পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আমরা তাগাদা দিচ্ছি।’

তখন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও কারা অধিদফতরের মহাপরিচালকের আইনজীবীদের উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ’চিঠি চালাচালি থেকে বের হয়ে দ্রুত নিয়োগ দিন। এত দিনেও আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করতে পারলেন না। ক্ষমতা এবিউজ করার জন্য না, ক্ষমতা মানুষকে সেবার জন্য। এটা মনে রাখবেন।’

আদালত আরও বলেন, ‘কারাগারে তো গরিব মানুষ থাকে। ধনীরা কারাগারে গেলেও তাদের জন্য ডিভিশনের ব্যবস্থা থাকে। তাই কারাগারে দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে গরিব মানুষকে বাঁচান।’

এরপর আদালত আগামী ১ মাসের মধ্যে কারাগারের শূন্য পদে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দেন।

এর আগে ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর দেশের সব কারাগারে শূন্যপদে ডাক্তার নিয়োগ দিতে কারা কর্তৃপক্ষ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে গত ১১ ডিসেম্বর মধ্যে এই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে বলা হয়। অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও সে আদেশ বাস্তবায়ন না করায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজিকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট।

প্রসঙ্গত, কারা চিকিৎসক সংকট নিয়ে দেশের কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে আদালতে রিট দায়ের করেছিলেন আইনজীবী মো. জে আর খাঁন (রবিন)।

পরে ২০১৯ সালের ২৩ জুন জারি করা রুলে কারাগারে আইনগত অধিকার নিশ্চিতে মানসম্মত থাকার জায়গা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না এবং বন্দিদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে কারা চিকিৎসকের শূন্যপদে নিয়োগ দিতে নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে তা জানতে চেয়েছেন। আইন মন্ত্রণালয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব (সুরক্ষা বিভাগ), স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সচিব, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও কারা মহাপরিদর্শককে এসব রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এছাড়াও অপর এক আদেশে আদালত সারা দেশের সব কারাগারে বন্দিদের ধারণক্ষমতা, বন্দি ও চিকিৎসকের সংখ্যা এবং চিকিৎসকের শূন্যপদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *