রাতের আঁধারে মিয়ানমারে ফিরে গেলো রোহিঙ্গা পরিবার

Picsart 23 08 30 20 59 12 717
print news

চলমান রোহিঙ্গা সংকটের অর্ধযুগ পার হলেও প্রত্যাবাসনে আশার আলো নেই। বরং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে অপহরণ, চাঁদাবাজি, মাদক কারবার ও চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধে প্রায়ই ঘটছে খুন-সংঘর্ষ। এসব অপরাধকর্মের কারণে বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আশ্রিত দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রত্যাবাসনে বিলম্বে কোনো কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করলেও অনেক রোহিঙ্গা বিনা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার ফিরতে চেষ্টা করছেন। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) রোহিঙ্গা নিপীড়নের ‘কালো দিবস’ পালনের সমাবেশে প্রত্যাবাসন বিলম্ব হলে রোহিঙ্গারা রোডমার্চ নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে মিয়ানমার ঢুকে পড়ার হুঁশিয়ারি দেন। এ হুঁশিয়ারির তিনদিনের মাথায় স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবার নিয়ে গোপনে মিয়ানমার পালিয়েছেন এক রোহিঙ্গা। তবে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষই বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন না।

সূত্রমতে, কক্সবাজারের টেকনাফের ২৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সোমবার (২৮ আগস্ট) রাতে মিয়ানমার পাড়ি দিয়েছেন নাজির আলম (৪৬) নামের এক রোহিঙ্গা। তার দলে স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়েসহ ছয়জন ছিলেন। তারা ক্যাম্প ছেড়ে মিয়ানমারের মংডুতে নিজ গ্রামে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।

মিয়ানমার চলে যাওয়া রোহিঙ্গারা হলেন টেকনাফের লেদা ২৪ নম্বর ক্যাম্পের ব্লক এ/১৭ (এফসিএন-২৫৫৯৪২)-এ বসবাসরত নাজির আলম (৪৬) ও তার স্ত্রী রাশেদা বেগম (৩৬), ছেলে মোহাম্মদ জাকের (১৯), সৈয়দ নূর (১০), মেয়ে তাসমিন আক্তার (১৩) ও সুবেকা (৯)।

ক্যাম্প ছেড়ে তারা মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের মংডু থানার চালিপাড়া নিজ গ্রামে চলে গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ২৪ নম্বর ক্যাম্প মাঝি (নেতা) মৌলভি মোহাম্মদ সাকের।

রাতের আঁধারে মিয়ানমারে ফিরে গেলো রোহিঙ্গা পরিবারইউএনএইচসিআরের করা তালিকায় টিক চিহ্ন দেওয়া ব্যক্তিরাই রোহিঙ্গা নাজির আলম ও তার পরিবারের সদস্যরা

তিনি বলেন, সোমবার রাতে তারা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যান। তারা টেকনাফের বরইতলি স্থান দিয়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলে গেছেন বলে খবর পেয়েছি। বিষয়টি আমরা লেদা ক্যাম্পের দায়িত্বরত ক্যাম্প ইনচার্জকে (সিআইসি) জানিয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে টেকনাফের হ্নীলার লেদা ২৪ নম্বর ক্যাম্পের দায়িত্বরত ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) নজরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে খুদেবার্তা পাঠালেও উত্তর আসেনি।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৬ এপিবিএন অধিনায়ক ও পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি হাসান বারীকেও ফোনে পাওয়া যায়নি।

কক্সবাজার শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রতাবাসন কার‍্যালয়ের কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, খোঁজ নিয়ে জানাতে হবে।

জানলে পরে জানানোর অনুরোধ করা হলে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা সোয়া ৬টা) পর্যন্ত কোনো উত্তর আসেনি।

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত ছয় বছরে দুই শতাধিক রোহিঙ্গা খুন হয়েছেন। সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার, মাদক চোরাচালানের টাকা ভাগাভাগির জের ধরেই বেশিরভাগ খুনের ঘটনা ঘটেছে। আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আরাকান সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) নামের মিয়ানমারভিত্তিক দুটি প্রধান সশস্ত্র গোষ্ঠীর উপগোষ্ঠী হিসেবে আরও ১০-১২টি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনী ক্যাম্পে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে। এসব অপরাধী বাহিনীর কারণে বারবার বিলম্বিত হচ্ছে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম।

সূত্র বলছে, এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মিয়ানমার সরকারের গুপ্তচর হযে অপরাধকর্মে জড়িয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে অস্থিতিশীল করে রাখতে চায়। তারা প্রত্যাবাসিত না হয়ে আশ্রয় ক্যাম্পে ঝুলে থাকতে চান। কিন্তু সাধারণ রোহিঙ্গারা চাচ্ছেন, যতদ্রুত সম্ভব নিজেদের বাপ-দাদার ভিটেমাটিতে ফিরে যেতে। তবে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম বিলম্ব হওয়ায় অনেকে অনিরাপদ জেনেও নিজ উদ্যোগে মিয়ানমারে ফিরে যেতে উদ্যোগী হচ্ছেন। এরই অংশ রোহিঙ্গা নাজির আলম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *