কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এপেন্ডিসাইটিস অপারেশন করতে গিয়ে ভুল চিকিৎসার শিকার হওয়া সংবাদকর্মী মহিউদ্দিন মাহীর অভিযোগকে কেন্দ্র করে বদলী করা হয়েছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডাঃ মো: মোমিনুর রহমানকে।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালযের সিনিয়র সহকারী সচিব মো: আলমগীর কবীরের লিখিত এক প্রজ্ঞাপনে ঢাকা মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনিস্টিউটের সহকারী পরিচালক পদে পদানবতি করা হয়। তিনি সদর হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক (উপপরিচালক) পদমর্যদায় চাকরি করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে সাংবাদিক মহিউদ্দিন মাহী চলতি বছরের ২২ জুলাই স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে তথ্য নির্ভর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সে অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পৃথক প্রজ্ঞাপনে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের উপপরিচালক ডা. ইফতেখার আহমদকে সভাপতি, চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের এ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট ডাঃ রাজদ্বীপ বিশ্বাসকে সদস্য সচিব, একই হাসপাতালের সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডাঃ বিজন কুমার নাথকে সদস্য করে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ রাশেদা সুলতানা।
জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ বুলেটিনের কক্সবাজার প্রতিনিধি, মহিউদ্দিন মাহী জানান, চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি এপেন্ডিসাইটিসের তীব্র ব্যাথা নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। চরম অবহেলা করে পাঁচ দিন হাসপাতালের কক্ষে ফেলে রাখা হয়। ৫ দিন পর ২৩ জানুয়ারি এপেন্ডিসাইটিসের অপারেশন করা হয়। সেই দিন অদক্ষ ও দায়িত্বহীন বেসরকারি ডাঃ সূলভ আশ্চর্য্যকে দিয়েই স্পাইনাল এ্যানেসথেসিয়া দেয়া হয়। সাংবাদিক মাহীর দাবী, আমাকে অপারেশনের দিন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বেসরকারি চিকিৎসক, কনসালটেন্ট নয় এমন ডাঃ সূলভকে দিয়ে এ্যানেসথেসিয়ায় ইচ্ছেকৃত ভুল করা হয়। যার কারণে ভুক্তভোগী মহিউদ্দিন মাহী সেই দিন থেকে টানা ৮ মাস বাম পা অবশ হয়ে যায়। এক প্রকার মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
অপারেশনের মাস তিনেক আগে সদর হাসপাতালের সুপার ডাঃ মোঃ মোমিনুর রহমানের অনিয়ম দূর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে বক্তব্য গ্রহণ করে মাহী। কোনো মিডিয়ায় সংবাদ না করতে হুমকি ও তার দেহরক্ষী হাসপাতালের পরিচ্ছন্ন কর্মী খুরশীদাকে দিয়ে কক্সবাজার সদর থানায় একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করানো হয়। এর আগেই সাংবাদিক মহিউদ্দিন মাহী আত্নরক্ষার্থে সদর মডেল থানায় হাসপাতাল সুপার মোমিনুর রহমান ও পরিচ্ছন্ন কর্মী খুরশিদাকে আসামী করে অভিযোগ করে রাখেন। ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যায় সাংবাদিক মাহী। ওই দিন হাসপাতালের আরএমও ডাঃ আশিকুর রহমানকে দিয়ে জোরপূর্বক হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোনো সংবাদ না লিখতে ও কোনো অভিযোগ না করতে লিখিত কাগজ নেয় মহিউদ্দিন মাহীর কাছ থেকে। আড়াই মাস পর এপেন্ডিসাইটিসের তীব্র ব্যাথা শুরু হলে হাসপাতালের আউটডোর বিভাগে গিয়ে ডাক্তার দেখান। সেই দিন সাংবাদিক মাহী হাসপাতাল সুপারের আক্রোশ থেকে বাঁচতে শুধু মহিউদ্দিন ও বয়স কমিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। তারপরও হাসপাতালের সুপার মোমিনুর রহমানের আক্রোশ থেকে বাঁচতে পারেননি। অপারেশন কক্ষে মহিউদ্দিন মাহীকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে পঙ্গু বানিয়ে ফেলেন। বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন মিডিয়া ও জাতীয় পত্রিকায় লেখালেখি হয়। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন তীব্র প্রতিবাদ ও বিচার দাবী করেন।
উল্লেখিত বিষয়টি নিয়ে প্রতিকার পেতে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুল চিকিৎসার শিকার মহিউদ্দিন মাহী। তার অভিযোগ আমলে নিয়ে হাসপাতাল সুপারকে বদলি, ও তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।