জিম্মি জাহাজের ‘রুটিন কাজে’ ফিরেছেন বাংলাদেশি নাবিকরা

mv abdullah 20240318123828
print news

ভারত মহাসাগরে সোমালীয় জলদস্যুদের ছিনতাইয়ের শিকার এমভি আবদুল্লাহ’র রুটিন মেইনটেনেন্সের কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশি নাবিকদের। শনিবার থেকেই নাবিকরা জাহাজের ডেক এবং ইঞ্জিন রুমের রুটিন কাজ শুরু করেন। এতে জাহাজে পরিবহনরত ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে দেখা দেওয়া শঙ্কা অনেকটাই লাঘব হলো।

জিম্মি নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এমন এক সিনিয়র নাবিক নাম না প্রকাশের শর্তে জাগো নিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘স্বস্তির বিষয় হলো বাংলাদেশি নাবিকদের সঙ্গে জলদস্যুদের একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় স্থান পরিবর্তনের পর আমাদের নাবিকদের জাহাজের রুটিন চেকাপের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখন আমাদের নাবিকরা ডেক এবং ইঞ্জিন রুমের সব কিছু দেখভাল করছেন।’
এর আগে জাহাজের মালিকপক্ষের কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় জাহাজে থাকা ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা মো. আতিকউল্লাহ খান।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের একটা প্রবলেম হচ্ছে, আমাদের জাহাজে কোল কার্গো আছে। অ্যাবাউট ফিফটি ফাইভ থাউজ্যান্ডস। এটি একটু ডেইঞ্জারাস কার্গো, এটা হেজার্ড আছে। এটার মিথেন কনসেনট্রেশন বাড়ে। সর্বশেষ অক্সিজেন লেভেল ৯-১০ পার্সেন্ট ছিল। এটা রেগুলার আপডেট নিতে হয়। ইনক্রিজ হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন হবে।’
এর আগে গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। ঘটনার পরপরই বাংলাদেশি নাবিকদের একটি রুমে বন্দি করে ফেলা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) কড়াকড়ি শিথিল করে নাবিকদের কেবিনে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম সলিড বাল্ক কার্গোস (আইএমএসবিসি) কোড অনুযায়ী, কয়লার তাপমাত্রা যদি ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়, তখন কার্গোতে কয়লা লোড দেওয়া যাবে না। কারণ কয়লার তাপমাত্রা ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে ধরে নেওয়া হয় এটি সেল্ফ হিটিংয়ের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। কয়লা পরিবহনের ক্ষেত্রে লোডিংয়ের পর হোল্ড ২৪ ঘণ্টা ভেন্টিলেটেড করতে হবে। যদি এটি করা না হয়, তাহলে কয়লা সেল্ফ হিটেড হয়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, কোল কার্গো ঝুঁকিপূর্ণ। বিপদের শঙ্কায় কিছু নিরাপত্তা পদক্ষেপ মেনে চলতে হয়। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় জাহাজের খোলের ভেতরে মিথেন, কার্বন মনোক্সাইড এবং অক্সিজেনের পরিমাপ নিতে হয়। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় বের করে দিতে হয় নির্ধারিত মাত্রার বেশি গ্যাস।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নাবিক জানান, জলদস্যুরা এমভি আবদুল্লাহ’র ইঞ্জিন রুমে কোনো ধরনের পাহারা বসায়নি। জলদস্যুরা অবস্থান করছে। এমনকি জলদস্যুরা জাহাজের ভেতর কেবিনে থাকছে না। তাদের দুইতিনজন শীর্ষ ব্যক্তি থাকছেন জাহাজের পাইলট ক্যাবিনে, বাকিরা ব্রিজে টহলরত অবস্থায় থাকছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নাবিকরা জাহাজের স্টোর থেকে তাদের কম্বল বেডশিট বালিশ দিয়েছে। জাহাজে থাকা খাবার জলদস্যুদের সঙ্গে ভাগ করে খাচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে স্থানীয় মোবাইল অপারেট কোম্পানির সিম ও নাবিকদের সরবরাহের কথা জানিয়েছে জলদস্যুরা। একই সঙ্গে জাহাজের খাবার ফুরালে উপকূল থেকে খাবার আনার কথা বলেছে।’
কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজে যেহেতু আমাদের টেকনিক্যাল পার্সন আছে, তাই জলদস্যুরা এই করণীয়টুকু করবেন। কারণ, এই মুহূর্তে জাহাজ ও নাবিকরা তাদের জিম্মায়। নিজেদের স্বার্থরক্ষার জন্যই জাহাজ ও আবাসস্থল নিরাপদ রাখার স্বার্থে নাবিকদের সহযোগিতা করবেন জলদস্যুরা।’
তিনি জানান, ২৩ বাংলাদেশি নাবিককে উদ্ধারে ‘মধ্যস্থতাকারী’ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন তারা। তবে মুক্তিপণ বা জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে জলদস্যুরা এখনো যোগাযোগ করেনি। জাহাজটির কিডন্যাপ অ্যান্ড র‌্যানসম (কেঅ্যান্ডআর) ইন্স্যুরেন্স করা আছে। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিও জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে কাজ করছে।
বাংলাদেশি জাহাজটি গত তিনদিন ধরে সোমালিয়ার গোদবজিরান উপকূলের ৪ নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *