প্রাণের ক্যাম্পাস-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

asp
print news

 

আনোয়ার হোসেন শামীম। 

আমি সেই বিরল গোত্রীয়দের একজন, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনো ভর্তি পরীক্ষাই দেয়নি বা আবেদন ফরমই কেনেনি। বিষয়টা এমন ছিল যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেলে ওই বছর আমার আর কোথাও ভর্তি-ই হওয়া হবে না।
বিশাল এ ঝুঁকি নিয়ে ‘সাহসিকতা’-র পরিচয় দেওয়ার পর সোৎসাহে কোচিং সেন্টারে ভর্তিও হয়ে গেলাম। কিন্তু এ পর্যন্তই। কদিন যেতে না যেতে দেখি ক্লাস বিরক্তিকর লাগছে। ফলাফল? ধীরেধীরে কোচিং-এ অনিয়মিত হয়ে পড়া। অন্যদিকে আত্মপণ্ডিতি করে বিভিন্ন কোচিং-এর লেকচার শীট, গাইড বই সংগ্রহ করে অনেকটা নিজে পড়ে-টরে কোনো রকম পরীক্ষা দিলাম। পরীক্ষা হলোও মাঝারি কিসিমের।
রেজাল্টের দিন দুরুদুরু বুকে রেজাল্ট শীটের উপর নজর বুলালাম। কিন্তু এ কী! অবাক হয়ে দেখি কিভাবে কিভাবে যেন গ (বিজনেস ফ্যাকাল্টি), ঘ (সম্মিলিত) দুই ইউনিটেই টিকে গেছি এবং মোটামুটি প্রথম সারিতেই। জানি না কেউ বিশ্বাস করবেন কিনা, আমি যেমন প্রিপারেশন নিয়েছি বা পরীক্ষা দিয়েছি, ভেবেছি বড়জোর ওয়েটিংটোয়েটিং-এ হয়তো থাকতে পারি। ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি একেবারে চান্স পেয়ে যাব।
সবাই পরামর্শ দিলো যেহেতু বিজনেস স্টাডিজের স্টুডেন্ট, গ ইউনিটে ভর্তি হও। তথাস্তু। সাবজেক্ট পেলাম একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস। আর অ্যাটাচড আবাসিক হল মাস্টার দা সূর্যসেন। ভাগ্যক্রমে ক্যাম্পাসের এ হলটাই দূরত্বের দিক থেকে বিজনেস ফ্যাকাল্টির সবচেয়ে নিকটের। সেই নৈকট্য এতটাই যে, আমার রুম থেকে বের হয়ে একটু সামনে যেয়ে দাঁড়ালেই প্রথম পিরিয়ডে (সকাল ৮ টা) আমাদের ‘২০৬ নং’ ক্লাসরুমে স্যার/ম্যামেরা কখন ঢুকেছেন, তা দেখা যায়। আর টিচারকে ক্লাসে ঢুকতে দেখেই আমার (এবং সমগোত্রীয় অন্য কিছু অলস হতভাগারও) হল থেকে অনেকটা ‘দৌড়’ লাগিয়ে বেশিরভাগ সময় রোল কল শুরু হওয়ার আগে বা রোলকলের মাঝে ক্লাসরুমে পৌঁছানো সম্ভব হয়। অবশ্য কোনোকোনো বিরূপ ভাগ্যের দিনে আমি/আমরা ক্লাসে পৌঁছানোর আগেই রোলকল শেষও হয়ে যেত। 😛 😛
একটা চমকপ্রদ তথ্য:
আমাদের ক্লাসে সর্বাধিক উপস্থিতির পুরস্কার স্বরূপ নাজিম উদ্দিন স্যারের কাছ থেকে কলম উপহার পেয়েছিল যে রুমা নামের একটি মেয়ে Iren Akter Ruma, সে কিন্তু ক্যাম্পাসের কোনো আবাসিক হলের বাসিন্দা ছিল না, এমনকি থাকতো না ঢাকা শহরেও। প্রতিদিন সকালে গাজীপুর থেকে বাসে ঝুলেঝুলে এসে কিভাবে সর্বাধিক এটেন্ডেন্স নিশ্চিত করতে পারল, এটা রুমার কাছে আমার বহুল আকাঙ্ক্ষিত কিন্তু অজিজ্ঞাসিত একটি প্রশ্ন।
বিসিএস পাস করেছি দেখে লোকে এখন মনে করে আমি মনে হয় অনেক মেধাবী পরিশ্রমী.. ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু বিজনেস ফ্যাকাল্টির দুই তলার উত্তর পাশ, সূর্যসেন হলের ৪২৬/ক, ৩৪২ এবং ৫৫৮ নং রুম আর মোশারফ Dewdrop Mosharrof, পিন্টু, সেলিম, Washim Uddin Jewel Rakib Hasan, Anawar Hossain, Saifur Rasel সহ আরো অনেক অনেক বন্ধু সতীর্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক ছাত্রের অলসতা, পড়ালেখাবিমুখ ছাত্রজীবনের নীরব স্বাক্ষী।
সর্বশেষ একটা ক্রাশ & কনফেশনঃ
ভার্সিটি লাইফে আমি সর্বোচ্চ মনযোগে একজন টিচারের ক্লাসই করতাম- তানজিনা ম্যাম। কারণ? সেটা আপাতত অপ্রকাশিতই থাক।
আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কততম যেন জন্মদিন! পেশাগত কাজে বৃষ্টির মধ্যে দৌড়ানোর ফাঁকেফাঁকে কী, না কী উল্টাপাল্টা ক এর নিচে ব লিখে যাচ্ছি। বিরক্ত হয়ে আমাকে বকা দিয়েন না দয়া করে। শুভ জন্মদিন প্রাণের ক্যাম্পাস, প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *