তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনতে এবার জামায়াতের রিভিউ আবেদন

dfw
print news

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি রিভিউ আবেদন দায়ের করেছে।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার আপিল বিভাগে এ রিভিউ আবেদন দায়ের করেন বলে জানিয়েছেন দলটির আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির।

গত ২০ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি রিভিউ আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ২৪ অক্টোবর দিন ধার্য করেন চেম্বার আদালত। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হবে। আদালতে রিভিউ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, ড. শরীফ ভূঁইয়া।

এর আগে, ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তবে পরবর্তী দশম ও একাদশ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে বলে মত দেন আদালত। আর এ ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনে সংসদে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে বলেও জানিয়েছিলেন আদালত। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালত তার রায়ে বলেন, আপিল বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতেই আবেদনটি গৃহীত হয়েছে। এর মাধ্যমে সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধনী) আইন ১৯৯৬ এই

নির্দেশের পর থেকে অবৈধ ও সংবিধান বহির্ভূত ঘোষণা করা হলো। তবে আইনসম্মত না হলেও (প্রয়োজনের কারণে আইনসম্মত এবং জনগণের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন, সুপ্রাচীনকাল ধরে চলে আসা নীতিমালার ভিত্তিতে) আগামী দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করা ত্রয়োদশ সংশোধনীর আওতায়ই হতে পারে।

এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতিদের মধ্য থেকে অথবা আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে একজনকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিধানটি বাতিল করার পূর্ণ স্বাধীনতাও সংসদের থাকবে। একইসঙ্গে ২০০৫ সালে এ প্রসঙ্গে দায়ের করা লিভ টু আপিলটিও খারিজ করা হলো বলে জানান আদালত।

২০১১ সালের ৬ এপ্রিল এ আপিলের ওপর শুনানি গ্রহণ শেষে বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন আপিল বিভাগ। রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায়

মামলার অন্যতম পিটিশনার আবদুল মান্নান খান বলেন, ‘আপিল বিভাগের এই আদেশের ফলে দেশের গণতন্ত্রের ভিত আরও সুদৃঢ় হবে এবং বিচার বিভাগ আরও বেশি প্রভাবমুক্ত থাকতে পারবে।’

আপিলকারীর আইনজীবী এমআই ফারুকী বলেন, ‘আপিল বিভাগে এ রায়ের ফলে আমরা সংবিধান রক্ষা করতে পেরেছি। এটি সংবিধান, গণতন্ত্র ও জাতির জন্য খুবই ভালো হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা হলো সামরিক শাসনের আরেকটি রূপ। সামরিক শাসন আমলে যেমন সংবিধানের কিছু ধারা রহিত ও অকার্যকর রাখা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও তা করা হয়।’

বিশিষ্ট আইনজীবী ও এ মামলার আমিকাস কিউরি ড. এম জহির বলেন, ‘সুন্দর রায় হয়েছে, আমি দীর্ঘদিন বলেছি, বিচারকদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখতে। এ রায়ে আমার কথাই অনেকটা প্রতিফলিত হয়েছে। এ রায় অনুযায়ী আগামী দশম ও একাদশ নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায়। কিন্তু বিচারকদের না জড়ানোর জন্য সংসদ সংশোধনী আনতে পারবে বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে।’

তবে গত ২৫ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ ব্যক্তি। বাকিরা হলেন– তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। তাদের পক্ষে অ্যাডভোকেট শরীফ ভূঁইয়া ও ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন রিভিউ আবেদন করেন।

এরপর ১৬ অক্টোবর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে আরেকটি রিভিউ আবেদন জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। ২০ অক্টোবর বিচারপতি মো. রেজউল হকের নেতৃত্বাধীন চেম্বার জজ আদালত রিভিউ দুটির ওপর ২৪ অক্টোবর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন নির্ধারণ করেন।

প্রসঙ্গত, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিন জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ওই বছরের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ এ রিট খারিজ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করা হয়।

এরপর ২০০৫ সালে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন অ্যাডভোকেট সলিম উল্লাহ। দীর্ঘ বিরতির পর গত ১ মার্চ শুনানি শুরু হয়। আদালত এ মামলায় আট জন আমিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) নিয়োগ করে তাদের মতামত শোনেন।

তাদের মধ্যে পাঁচ জন সরাসরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পক্ষে মত দিয়েছেন। তারা হলেন– ড. কামাল হোসেন, টিএইচ খান, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ও ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ। অপর আমিকাস কিউরি ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে মত দেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ও ড. এম জহির তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের পক্ষে মত দিয়ে তাদের প্রস্তাব আদালতে তুলে ধরেন। এছাড়া তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পক্ষে মত দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *