শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ড্র করলেই সেমিফাইনাল। হারলেও সেটির ব্যবধান যেন না হয় দুই গোলের বেশি। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচের আগে বাংলাদেশের সামনে এই ছিল সমীকরণ। কিন্তু সেসব সমীকরণ মেলাতে হয়নি। ভারতকে হারিয়েই নারীদের সাফের সেমিফাইনালে উঠেছে জেমস পিটার বাটলারের দল।
বুধবার নেপালের দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও ভারত। যেখানে ভারতকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। চারটি গোলই হয়েছে খেলার প্রথমার্ধে। বাংলাদেশের হয়ে জোড়া গোল করেছেন অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড তহুরা খাতুন। অন্য গোলটি আসে ডিফেন্ডার আফঈদা খন্দকারের পা থেকে। ভারতের হয়ে ব্যবধান কমান অধিনায়ক বালা দেবী। এই জয়ের সুবাদে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রতিযোগিতার শেষ চারে উঠল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। দুই খেলায় একটি ড্র ও একটি পরাজয়ে এক পয়েন্ট নিয়ে সাফ থেকে বিদায় নিল পাকিস্তান। আর ৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হলো ভারত।
ম্যাচের তৃতীয় মিনেটে প্রথম আক্রমণে বাংলাদেশ। লেফট উইং থেকে শামসুন্নাহার জুনিয়র ক্রস দেন ভারতের বক্সে থাকা বড় শামসুন্নাহারের কাছে। তবে এই ফরোয়ার্ড শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি
পঞ্চম মিনিটের বড় সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। ঋতুপর্ণা চাকমার কাছ থেকে পাস পেয়েও বলে পা লাগাতে পারেননি শামসুন্নাহার জুনিয়র। অথচ বক্সে তখন ভারতের কেবল একজন ডিফেন্ডার ছিলেন। অষ্টম মিনিটে মারিয়া মান্ডার দূরপাল্লার শট বক্সের ডান পাস দিয়ে বেড়িয়ে যায়।
দশম মিনিটে গোলরক্ষক রূপনা চাকমার অসতর্কতায় গোল হজম করতে বসেছিল বাংলাদেশ। তবে অল্পের জন্য গোল পায়নি ভারত। দুই মিনিট পর মনিষা কল্যান অফসাইড হলে বিপদে পড়েনি বাংলাদেশ।
১৪ মিনিটে ভারতের কয়েকজনকে কাটিয়ে বল নিয়ে এগিয়ে যান তহুরা খাতুন। বক্সে ঢুকে পাস দেন শামসুন্নাহারকে। তবে বল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগেই পড়ে যান তিনি। ডান প্রান্ত দিয়ে প্রতি আক্রমণে উঠে রূপনার পরীক্ষা দেন ভারতের ফরোয়ার্ড গ্রেস দ্যাংমি। ১৭ মিনিটে আরও একবার বাংলাদেশী ডিফেন্স ভেঙে বল বের করে ভারত। তবে আগুন্তুক গোলরক্ষক বিপদ বাড়াতে দেননি।
বাংলাদেশ ডেডলক ভাঙে ম্যাচের ১৮ মিনিটে। প্রথম পাওয়া কর্ণার থেকে দুর্দান্ত গোলে দলকে লিড এনে দেন আফঈদা খন্দকার। সাবিনা খাতুনের কর্ণার কিক যায় অনেকটা ফাকায় থাকা আফঈদার কাছে। সামনে জটলা দেখেই কিনা এই ডিফেন্ডার বল কিছুটা উড়িয়ে মারেন সোজা বক্সে। ভারতের গোলরক্ষক লাফিয়ে বল ধরার চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশের মেয়েরা।
গোলে এগিয়ে থেকেও আক্রমণে আরও ধার বাড়ায় বাংলাদেশ। চেষ্টা অব্যাহত রাখায় বাংলাদেশ লিড বাড়ায় খেলার ২৯ মিনিটে। এ সময় লিড দ্বিগুণ করেন তহুরা। মূলত তহুরা সঙ্গে ওয়ান টু খেলে বক্সে ঢুকেন সাবিনা। তবে তাকে আটকে বল ক্লিয়ার করে ভারত। যদিও মাছ মাঠে বল পেয়ে যান বাংলাদেশের ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীন। বল রিসিভ করে মাপা উড়ন্ত পাস নেন বক্সে থাকা তহুরাকে। গোলমুখ থেকে খুব সহজেই বক্সে বল জড়ান অভিজ্ঞ এই ফরোয়ার্ড।
৩২ মিনিটে ভারতের আক্রমণ প্রতিহত করেন মাসুরা। তিন মিনিট পর মনিষার আরও একটি আক্রমণ প্রতিহত হয় র্বাংলাদেশর ডিফেন্সের সামনে। পরের মিনিটে বাংলাদেশকে বাঁচান রূপনা। ভারতের বালা দেবীর সামনে একা পড়েও তাকে গোলবঞ্চিত করেন অভিজ্ঞ এই গোলরক্ষক। ৩৮ মিনিটে মসিষার ফ্রি কিক শট লাগে গোলবারে।
৪২ মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ায় বাংলাদেশ। শামসুন্নাহার সিনিয়র ও জুনিয়র বল দেওয়া-নেওয়ার মধ্যে বক্সের ওপর বল পান তহুরা। জোরালো শটে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন বাংলাদেশের এই ফরোয়ার্ড। পরের মিনিটেই অবশ্য ভারত এক গোল পরিশোধ করে। ভারতের আক্রমণে বাংলাদেশের গোলরক্ষক রূপনা গ্রিপ করতে পারেননি। গোলরক্ষকের হাত ফস্কে যাওয়া বলে হেডে জালে পাঠান ভারতীয় অধিনায়ক বালা দেবী।
বিরতির পরও বাংলাদেশের গোলের ক্ষুধা কমেনি। এসময় ভারতকে চেপে ধরে বাংলাদেশের মেয়েরা। জোড়া গোল করা তহুরা বেশ কয়েকবার প্রতিপক্ষের রক্ষণে আতঙ্ক ছড়ান।
তবে গোলের জন্য মরিয়া ভারতও আক্রমণে ধার বাড়ায়। ৫৬ মিনিটে সঞ্চিতার শট বাম দিকে ঝাঁপিয়ে সেভ করেন বাংলাদেশর গোলরক্ষক রূপনা। ৫৮ মিনিটে দুর্দান্ত খেলা মারিয়াকে তুলে বদলি হিসেবে স্বপ্নারানীকে নামান কোচ। ৬২ মিনিটে প্রায় একাই কয়েকজনকে কাটিয়ে বল নিয়ে বাংলাদেশর সীমানায় ঢুকে পড়েন ভারতের মনিষা। শেষ মুহূর্তে ওই আক্রমণ প্রতিহত করা গেলেও, বল ক্লিয়ার করতে পারেনি বাংলাদেশ। দ্বিতীয় আক্রমণে জ্যোতি চৌহানের গতিময় শট সেভ করেন রূপনা। ৬৭ মিনিটে আরও একটি সেভ করেন এই গোলরক্ষক। ৭৭ মিনিটে রিম্পা হালদারের ক্রস থেকে শট গোলে রাখতে পারেননি জ্যোতি। বল বেড়িয়ে যায় বক্স ঘেষে।
৮০ মিনিটে স্বপ্নার দূরপাল্লার শট বক্সের ডান কোন দিয়ে ভারতের জাল খুজে নিচ্ছিল। শেষ মুহূর্তে কর্নারের বিনিময়ে সেটি ক্লিয়ার করেন ভারতের গোলরক্ষক পান্থই চানুকে। শেষ দিকে চেষ্টা করেও আর কোনো দল গোল করতে পারেনি।