রোহিঙ্গা যুবক শিবির নেতা থেকে ছাত্রলীগ সভাপতি

Picsart 23 11 02 01 24 31 551
print news

কক্সবাজার পৌরসভার আওতাধীন ‘রুমালিয়ার ছড়া আওয়ামী পরিবার’ এর ম্যাসেঞ্জার গ্রুপের এডমিন জামাল বিন তাহেরের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা ও শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। সে সাবেক শিবির সভাপতি। এই খবর জানাজানি হওয়ার পরে ওই গ্রুপ থেকে অভিযুক্ত জামাল বিন তাহেরকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, জামাল ছাত্রশিবিরের কক্সবাজার হাশেমিয়া কামিল মাস্টার্স মাদ্রাসা শাখার আওতাধীন “গেইট শাখা”র সাবেক সভাপতি। স্থানীয় শিবির নেতাদের সুপারিশক্রমে জামালকে সভাপতি করে শিবিরের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য একটি কমিটি সেটাপ দেন হাশেমিয়া মাদ্রাসা ছাত্রশিবিরের নেতৃবৃন্দ। জামাত অধ্যুষিত হাশেমিয়া মাদ্রাসায় ছাত্রলীগের কোন কমিটি ও কার্যক্রম না থাকায় মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত অবস্থায় শিবিরের কার্যক্রম সক্রিয়ভাবে পরিচালনা করেছেন এই শিবির নেতা। পরে ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি সক্রিয় করার লক্ষ্যে শহর ছাত্রলীগের ইউনিট বাড়াতে কমিটি দিলে, সে কমিটিতে লাফ দিয়ে সভাপতি পদ ভাগিয়ে নেন সাবেক শিবির সভাপতি জামাল। এই কমিটির আগে উক্ত মাদ্রাসায় ছাত্রলীগের কোন কমিটি না থাকায় সহসায় সভাপতি পদ লাভ করেন জামাল। সিবিটুয়েন্টিফোর এর হাতে আসা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদনের প্যাডে দেখা যায়, তৎকালীন শহর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান ইকবাল রিপন ও সাধারণ সম্পাদক শাকিল আজম স্বাক্ষরিত ৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে সভাপতি মনোনীত হন জামাল। এ ঘটনায় আওয়ামী মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলে এলাকায় কানাঘুষা শুরু হয়। পরে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে গা ভাসায় সে। তাকে সেল্টার দিচ্ছে গুটিকয়েক আওয়ামী লীগ নেতা।

IMG 20231102 WA0009
ছাত্রলীগে যোগদানের আগে হাশেমিয়া গেট শাখা শিবিরের সভাপতি সেটাপ হওয়া প্যাড

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জামাল শহরের ৫নং ওয়ার্ডের আওতাধীন গোদার পাড়া এলাকায় ভাড়া থাকতেন। বর্তমানে ০৬ নং ওয়ার্ডের গরুর হালদা এলাকায় নিজস্ব বসতঘরে থাকেন। তার বাবা ও মা সহ সম্পূর্ন পরিবার রোহিঙ্গা। এখানে তারা ভোটার হতে পারেনি। মায়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে কক্সবাজারে অবস্থান নেয় তার চাচার সহযোগিতায়। তার আপন চাচা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ “আল এ্যাকিন” বাংলাদেশের শীর্ষ কমান্ডার হাফেজ জাবের। তিনি বর্তমানে পৌর এলাকার ৫নং ওয়ার্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।

রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বিগত ২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারি অনলাইন পোর্টাল উখিয়া নিউজ ডঢ কম, ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট অনলাইন পোর্টাল আলোকিত টেকনাফ ডট কম, ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর জাতীয় দৈনিক সমকালে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী হাফেজ জাবেরসহ সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা নুর বশর জানান, মাস্টার মুন্না, হাফেজ জাবের, আনাস, ইসলাম মাহমুদ, সেলিম, সাইফুসহ আরও কয়েকজন সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে উঠেছে। অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও ক্যাম্পে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে এরা বিপুল টাকা আয় করছে। এ নিয়ে বিরোধেও জড়িয়ে পড়ছে এসব গ্রুপ।

Picsart 23 11 02 01 17 36 180
রোহিঙ্গা জামালের চাচা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ আল-ইয়াকিনে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ

এদিকে, রোহিঙ্গা জামাল স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির সহায়তায় ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তার বাবা, মা ও ভাই এখনো ভোটার আইডি করতে সক্ষম হয়নি।

এছাড়াও, গুঞ্জন উঠেছে এই রোহিঙ্গা জামাল কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে যাচ্ছেন।

Picsart 23 11 02 02 21 46 102
কথিত শিবির নেতা জামলকে সভাপতি করে শহর ছাত্রলীগের অনুমোদিত প্যাড

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রুমালিয়ার ছড়া এলাকার এক ব্যক্তি জানান, আমরা এলাকাবাসীসহ সবাই জানি জামাল একজন রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা হয়ে কীভাবে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছে সেটা বোধগম্য হচ্ছে না। এসব রোহিঙ্গারা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হলে ভবিষ্যতে কক্সবাজার শহরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আরো বৃদ্ধি পাবে। তার ভোটার আইডি কার্ড বাতিলসহ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

রুমালিয়ার ছড়ার বিশিষ্ট কনস্ট্রাকশন ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম বলেন, জামাল একজন চিহ্নিত রোহিঙ্গা। তার বাবা, মা ও ৪ ভাই কেউ ভোটার হতে পারেনি। এই রোহিঙ্গা জামাল নাকি ভোটার হয়েছে শুনলাম। রোহিঙ্গা জামালসহ সকল চিহ্নিত রোহিঙ্গাদের ভোটার আইডি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।

Picsart 23 11 02 02 22 32 953
কথিত শিবির নেতা জামলকে সভাপতি করে শহর ছাত্রলীগের অনুমোদিত প্যাড

এছাড়াও রোহিঙ্গা জামাল কীভাবে রাজনীতি করে সেটা ভেবে পাচ্ছি না। তাকে যারা সেল্টার দিচ্ছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। আমি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।

তৎকালীন শহর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান ইকবাল রিপন বলেন, আমি শহর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি থাকা অবস্থায় স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সুপারিশে জামালকে হাশেমিয়া মাদ্রাসার শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি করেছি। তবে সেসময় তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ আমরা পাইনি। বর্তমানে জামালের সাথে সবার ভালো সম্পর্ক। এখন জামাল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনানের সাথে রাজনীতি করে, এবিষয়ে মারুফ আদনান ভালো বলতে পারবে। আপনি উনার কাছে জিজ্ঞেস করতে পারেন। রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা কিনা বলতে পারি না। কমিটি গঠনের সময় তার বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ পাইনি।

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান বলেন, জামাল বিন তাহের হাশেমিয়া মাদ্রাসা ছাত্রলীগের সভাপতি অনেক আগে থেকেই। তাকে তৎকালীন শহর ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ নেতা বানিয়েছে। তার বিরুদ্ধে জামায়াত শিবির ও রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে আগে কখনো অভিযোগ পাইনি, আমরা জানিনা। যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসে, তাহলে সত্যতা যাচাই বাছাই করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শিমুল শর্মা বলেন, জামাল বিন তাহেরের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ধরনের অভিযোগ নির্বাচন কমিশন অফিসে আসেনি। ভোটার হওয়া কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পেলে আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণিত হলে ভোটার আইডি কার্ড বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *